বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় ছেলের মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ | প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৮

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের (৭০) চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থানায় মামলা হয়েছে। এতে ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. টিপু সুলতান জানান, ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের হলেও সম্প্রতি ভিডিওটি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামলা দায়েরের সময় থানায় উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ। তিনি অভিযোগ করে বলেন,
“বাজারে গেলে কয়েকজন আমাকে জোর করে ধরে চুল-দাড়ি কেটে দেয়। আমি অনেক চেষ্টা করেও রেহাই পাইনি। বাজারে লোকজনও কম ছিল। তখন আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম, এখনও আল্লাহর কাছেই বিচার চাই। পরিবারের কথায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি তারা কী বিচার করে।”
তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন প্রায় ৮-৯ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিল, যাদের মধ্যে স্থানীয় নয়ন ও মজনুও ছিলেন। এখনো তারা এলাকায় ঘুরে তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
হালিম উদ্দিন তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে মাথার জট কেটে রাখেননি। শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) ভক্ত হওয়ায় ভিন্ন ধাঁচের বেশভূষায় পরিচিত তিনি। এলাকায় তাকে সবাই হালিম ফকির নামে চেনে।
তিনি কৃষিকাজ ও কবিরাজি করতেন। তার চলাফেরা স্বাভাবিক ছিল, কাউকে কখনো বিরক্ত করেননি। কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ কয়েকজন তার মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেয়।
এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে ভিডিওতে অসহায়ের মতো তার উচ্চারিত বাক্য— “আল্লাহ, তুই দেহিস”— এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।
ময়মনসিংহ জেলা বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন,
“হালিম উদ্দিন কাদেরিয়া ওয়া নকশবন্দিয়া অনুসারী। তাকে এভাবে হেনস্তা করা নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। যারা এমন করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।”
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।