দিঘলিয়ায় ধর্মীয় উন্মাদনায় ৭ বছরের জিসানকে হত্যার অভিযোগ

এস কে বাপ্পি, খুলনা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫২

ছবি: সংগৃহীত

উপজেলার মন্ডল টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন কোয়ার্টারে বসবাসকারী ৭ বছর বয়সি শিশু জিসানকে হত্যার অভিযোগে ওই এলাকার প্রতিবেশী ফয়সাল (২৬) ও তার বাবা-মা — জিএম হান্নান (৫২) ও মাহিনুর বেগম (৪৫) — সম্পূর্ণ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ তাদের শনিবার গভীর রাতেকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল; রবিবার দুপুরে তাদেরকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত: পুলিশ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডলের বক্তব্য অনুযায়ী, কয়েক মাস আগে ফয়সাল তাবলিগে অংশগ্রহণ করে ফিরে আসার পর থেকে এলাকার মানুষকে ইসলামি দাওয়াত দিতে শুরু করে। ৯ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নিজ বাসায় দাওয়াত দেয়ার সময় জিসান নামাজ পড়ার পরে ফয়সালের সাথে বাড়িতে যায়। কিছুক্ষণ পরেই ফয়সাল একটি দড়ি দিয়ে জিসানকে বেঁধে রান্নাঘর থেকে একটি দা এনে শিশুটিকে কুপিয়ে হত্যা করে। তদন্তে জানা গেছে—এই হত্যাকাণ্ডটি চালাতে ফয়সাল মাত্র বিশ মিনিট সময় নিয়েছিল।

শরীর লুকোনো ও লাশ গুম: হত্যার পর প্রথমে ফয়সালের মা ঘটনাটি আঁচ করতে না পারলেও পরে জানতে পারেন। ছেলে ও তার বাবা-মা প্রথমে নিহত শিশুটিকে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে, পরে চটের ব্যাগে করে বাড়ির পূর্ব পাশে দেওয়ালের কাছে মাটি চাপা দিয়ে লাশ গুম করে। কেউ যাতে বিষয়টা বুঝতে না পারে সেজন্য তারা মাটির ওপর রোদে শুকানোর জন্য পাটখড়ি সাজিয়ে রাখে—এ সম্পর্কেও তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া: হত্যার ঘটনায় সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও মন্ডল মিলের শ্রমিকরা একত্রে হয়ে ফয়সালের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য: দিঘলিয়া থানার জিআরও এএসআই ইমাম আলী স্বীকারোক্তি (১৬৪ ধারা) হওয়া নিশ্চিত করেন। থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচএম শাহীন বলেন, “কি কারণে কেন শিশু জিসানকে হত্যা করা হয়েছে—তার সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি ফয়সাল মাদকাসক্ত ছিলেন এবং তার সঙ্গে পরিবারের মধ্যে কিছুকাল ধরে মানসিক অস্থিতিশীলতার লক্ষণও ছিল।” মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডল আরও বলেন, জিসানকে দাওয়াতে দাওয়াত করার পর সে ঘরে আনার সময়ই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

পরিবারের শোক ও প্রতিবাদের আওয়াজ: নিহত জিসানের মায়ের আহাজারি থামছে না—ছাত্রীর ১২ বছর বয়সি বড় ছেলে রাশেদকে জড়িয়ে ধরে একের পর এক বিলাপ করে তিনি বলেন, “আমার বাজান তো কোনো অন্যায় করেনি। ওদের আমার পরিবারের সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। কেন আমার বাজানকে মেরে ফেললো? আমি এইদের বিচার চাই—ফাঁসিও চাই।” পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, জিসান বাবা-মায়ের সঙ্গে মন্ডল টেক্সটাইল মিলের কোয়ার্টারে থাকত; তার বাবা আলমগীর হোসেন ওই মিলের মেকানিক্যাল বিভাগে কর্মরত।

অভিযোগপ্রাপ্ত পরিবারের পটভূমি: ফয়সালের চাচা জিএম আকরাম জানান, ফয়সাল সরকারি স্কুল ও স্থানীয় কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করলেও মাঝে মাঝে তার আচরণ অস্বাভাবিক হতো, অনেকে তাকে “পাগলামি” বলতো এবং তিনি নিজেও পরামর্শ দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজনকে কঠোর হস্তক্ষেপ করার; কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি।

বর্তমান অবস্থান ও কার্যক্রম: ঘটনার পর পুলিশ অতিরিক্ত তদন্ত শুরু করেছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনসহ সাক্ষ্যগ্রহণের পর তাদেরকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছে—এখন তদন্ত কর্মকর্তারা অপরাধীন আইনগত প্রক্রিয়া ও ফরেনসিক তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন বলে জানানো হয়েছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top