প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেঙ্কারি তদন্ত বলছে কারা নাটের গুরু

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১৫:০৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত আরো অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে তদন্তে, যারা পিএসসির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। গ্রেফতারকৃত দুই উপ-পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করেছেন। কারা কারা জড়িত পিএসসির এবং পিএসসির বাইরে তাদের সবার নামই বলেছেন।

এই প্রশ্নপত্রে কারা চাকরি পেয়েছেন তাদের অনেকের নামই তারা জানেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই চাকরিতে রয়েছেন। এর মধ্যে আবু জাফরই প্রশ্ন ফাঁসের অন্যতম নাটের গুরু। তদন্তে বেরিয়ে আসছে তারা শতশত কোটি টাকার এই বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এ যেন সিনেমার ঘটনাকে হার মানিয়েছে। এতে বিব্রত তদন্ত কর্মকর্তারা।

যারা পিএসসিতে শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্বে রয়েছে এবং অতীতেও দায়িত্ব পালন করেছেন এরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার মতো জঘন্য ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। শীর্ষ কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকার পরেও কীভাবে দুই যুগ ধরে পিএসসি থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটল তার হিসাব মেলাতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই বলছেন তারা হয় জড়িত না হয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে অভিযুক্ত করা উচিত। এমন কোনো পরীক্ষা নাই যে এই চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে নাই।

তদন্তে বেরিয়ে আসছে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে অর্ধশতাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে এরা। কয়েক জন স্বীকারও করেছেন। নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট চক্রের একজন সদস্য নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নৈশপ্রহরী শাহাদাত হোসেন নগদ এবং সম্পত্তিসহ ১২ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি আরো অর্থের মালিক বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

গাড়ি চালক আবেদ আলী শত কোটি টাকা বানিয়েছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। এদের নেটওয়ার্ক সারা দেশে সক্রিয়। আবেদ আলী ও শাহাদাত যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হন তাহলে যেসব কর্মকর্তা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত তারা কি পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছে তা অকল্পনীয়। কোনো কোনো কর্মকর্তার হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য স্বীকারও করেছেন তারা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রশ্নপত্র ফাঁসে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে নামের তালিকা প্রকাশ করা। প্রতিটি জায়গায় ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। কিংবা পাওয়া যায় না সেবা। চাকরি পাওয়ার পরও ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেতে ধাপে ধাপে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পাশ করা কর্মকর্তাদের ৯০ ভাগই দুর্নীতিবাজ। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। এদের চাকরিতে থাকার কোনো অধিকার নাই। কারণ তারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে অপরাধ করে। যে অপরাধ চাকরির জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

এদিকে ১২ হাজার টাকার বেতনের নৈশপ্রহরী শাহাদাত হোসেন ১২ কোটি টাকার মালিক হওয়ায় নাটোরের সিংড়ার অধিবাসীরা হতবাক। সেখানকার সবার মুখে মুখে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধি জানান।

এদিকে প্রশ্ন ফাঁস করেছে তাদের নামের তালিকা করতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। অনেকেই তাদেরকে ‘আবেদ আলী ক্যাডার’ হিসাবে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও দাবি জানায়।

গত সোমবার রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বিসিএসের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন সিআইডির কাছে। খবর ইত্তেফাকের। 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top