মানুষের রুচির দুর্ভিক্ষে হিরো আলমের উত্থান হয়েছে
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৯:০০
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত ব্যাক্তি আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রায় সময়ই আলোচনায় থাকেন তিনি। প্রথমে মিউজিক ভিডিওতে মডেল হওয়ার মাধ্যমে যাত্রা করলেও পরবর্তীতে কখনো গান গাওয়া, সিনেমা নির্মাণ, কবিতা আবৃত্তি করা এবং নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এ কনটেন্ট ক্রিয়েটরের উত্থান নিয়ে সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী সংঘের একটি অনুষ্ঠানে কথা বলেন নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়েছি। আর সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একজন মানুষের উত্থান হয়েছে।
নাট্যজন মামুনুর রশীদ আরও বলেন, এই উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, আবার তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।
এছাড়া রোববার (২৬ মার্চ) মামুনুর রশীদ দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, হিরো আলম সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না তার। নাট্যাঙ্গনের কিছু মানুষ তার (হিরো আলম) কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। তারপর থেকেই হিরো আলমকে নিয়ে তিনি বিরক্ত ছিলেন।
এ ধরনের সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, উত্তরণের উপায় খুব কঠিন। কারণ, আমাদের রাজনীতিও তো রুচিহীন হয়ে গেছে। ওই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। রাজনীতি যদি সুস্থ হতো, দুর্নীতিপরায়ণ সমাজ যদি না হতো, তাহলে কিছু একটা হতো।
মামুনুর রশীদ আরও বলেছেন, আমাদের রাষ্ট্র তো কোনোভাবে রুচির উন্নয়নে কাজ করছে না। তাই এখন আমার আর রাজনীতির কাছে, রাষ্ট্রের কাছে, সংস্কৃতির কাছে, কোথাও আবেদন-নিবেদন নেই। আমার আবেদন, যে মানুষগুলো সামাজিক কাজের প্রতি দায়বদ্ধ, তাদের প্রতি।
তাদের বলতে চাই, আপনারা এগিয়ে আসুন। তারাই যদি আওয়াজ তোলেন, সারাদেশে মানুষ যদি প্রশ্ন করতে শুরু করে, মানুষ যদি সব ধরনের অন্যায়ে বাধা দেয়, বলতে থাকে, এটা ঠিক হচ্ছে না; এটা করতে পারবে না, তাহলেই হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তো বাধা দেয়াও ভুলে গেছে। কথার কথা, কাল মুরগির দাম ছিল ১০০ টাকা, আজ হয়ে গেছে ১৫০ টাকা। তারপরও কিন্তু মানুষ কিনছে।
ক্ষোভ থেকে মামুনুর জানান, আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, দেশে একটা রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। আমরা সেই রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। কী রকম? একদিকে মুক্তচিন্তা। মুক্ত চিন্তার জন্য হুমায়ূন আজাদ প্রাণ দিয়েছিলেন। মুক্তচিন্তার আরও অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের মিডিয়া মুক্ত হওয়ার ফলে আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতি দ্বারা উত্থান।
আজ আমাদের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। কী সুন্দর রাস্তাঘাট হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে, আমরা খুব মুগ্ধ। দেশের মানুষের কষ্টের অবসান হবে। কিন্তু দেশের মানুষের সংস্কৃতি ও রুচিই যদি ঠিক না করা যায়, এসব কে ব্যবহার করবে? তাই সংস্কৃতি ও রুচির উন্নয়নে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।