মঙ্গল গ্রহে যেতে কেন সবাই মরিয়া!

খালিদ বিন আনিস | প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ২৩:৩৪

মঙ্গল গ্রহে যেতে সবাই এখন মরিয়া!

মঙ্গল.. পৃথিবীর প্রতিবেশী সৌরজগতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। প্রাচীন কাল থেকে গ্রহটি নিয়ে রয়েছে নানা গল্প-উপকথা। এর নামকরণও হয়েছে বিভিন্ন দেবতার নামে। যেমন ইংরেজি ‘মার্স’ নামটি রাখা হয়েছে রোমান পুরাণের যুদ্ধ দেবতার নামে।

দিন যতো গড়িয়েছে, গ্রহটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল ততো বেড়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো, চীনা সংস্থা সিএনএসএ, সৌদি স্পেস কমিশন’সহ অনেক পরাশক্তিই এখন মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালাতে ব্যয় করছে বিপুল অর্থ। এমনকি মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা স্পেস এক্স’ও ২০১৬ সালে বিশাল পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।

রহস্যময় লাল গ্রহটিতে তবে কি আছে যার জন্যে সেখানে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্বের শক্তিমান দেশগুলো? গ্রহটিতে রাখতে চাইছে কর্তৃত্ব?

শক্তিমান দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা মঙ্গল জয়ে যখন বিশাল যজ্ঞে ব্যস্ত, তখন অনেক মহাকাশ গবেষক ও উৎসাহীরা মেলাতে চাইছেন হিসেব। রহস্যের পাশাপাশি তারা দেখছেন চমকে যাওয়ার মতো নানা সম্ভাবনাও। 

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ সায়েন্সের এসোসিয়েট ডিন প্রফেসর ক্রিস্টোফার ইম্পে বলছেন, চলতি মাসেই মঙ্গলে নামতে চলেছে তিন দেশের পাঠানো মহাকাশ যান। তিন দেশের তড়িঘড়ি অভিযান আর মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে লাল গ্রহটিতে তাদের নভোযান নামানোর বিষয়টি একবারেই স্বাভাবিক হিসেবে তিনি দেখছেন না।

তিনি বলছেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে রহস্যময় গ্রহটিকে হঠাৎ করেই অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে পৃথিবীর মানব সভ্যতা।‘

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই লাল গ্রহটি নিয়ে নানা অভিযান চালিয়ে আসছিল। গ্রহটিতে মূল্যবান খনিজ আর পানি আবিষ্কারের তথ্য প্রথম নাসা’ই জানায়।

নাসা ছাড়াও মঙ্গল গ্রহ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছে রাশিয়ার রসকসমস, চীনের সিএনএসএ, ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি ইসা আর ভারতের ইসরো। সেই তালিকায় যোগ দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনকুবের দেশ আরব আমিরাতও।

মহাকাশ গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা আরব আমিরাত ২০১৪ সালে হঠাৎ ইউনাইটেড আরব আমিরাত স্পেস এজেন্সি (ইউএইএসএ) প্রতিষ্ঠা করে। আর ঠিক পরের বছরই জানায় তারা যতো দ্রুত সম্ভব মঙ্গলে যাচ্ছে। 

মঙ্গল গ্রহে কাদের নভোযান নামছে? ইম্পে বলছেন, ‘চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং আরব আমিরাতের পাঠানো নভোযান নামতে চলেছে। তবে হিসেব বলছে, সবার আগে ৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে আরব আমিরাত মঙ্গলপৃষ্ঠ স্পর্শ করবে। এরপর নামবে নাসা আর সিএনএসএ’র নভোযান।

কিন্তু মঙ্গলে যেতে মরিয়া কেন শক্তিমান দেশগুলো? ইম্পে বলছেন, এসব দেশ ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে মঙ্গল অভিযান চালাতে পারে। যারা আগে যাবে তারা লাল গ্রহটির ব্যাপারে জ্ঞানে তো এগিয়ে থাকবেই তাছাড়া পৃথিবীবাসীর কাছে শক্তি প্রদর্শনও হতে পারে অন্যতম কারণ।

আরব আমিরাতের যে নভোযান মঙ্গল জয়ে গিয়েছে তার নাম ‘আল-আমাল’ যার অর্থ আশা। বলা হচ্ছে, মঙ্গলের এক বছর অর্থাৎ পৃথিবীর ৬৮৭ দিন ধরে আল আমাল সংগ্রহ করবে মঙ্গলের নানা তথ্য-উপাত্ত। এর মধ্যে অধিক গুরুত্ব পাবে লাল গ্রহটির চার ঋতুতে আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং এর বায়ুমণ্ডল।

ফলে অজানা গ্রহটিতে বসবাসের সম্ভাবনার বিষয়টিও যে অন্যতম তা অনেকটাই পরিষ্কার ম্যাথিউ সিগলারের কাছে। মার্কিন প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইন্সটিটিউটের এই গবেষক বলছেন, পৃথিবীর প্রাণীর জীবনধারণের জন্য গ্রহটি উপযোগী কিনা সে সম্পর্কে অনেক তথ্যই এই অভিযানের ফলে বেরিয়ে আসবে।

কিন্তু মহাকাশ গবেষণায় একেবারেই পিছিয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি কেন সুদূর মঙ্গল নিয়ে আগ্রহী হলো? মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘স্কুল অফ অ্যাডভান্সড এয়ার অ্যান্ড স্পেস স্টাডিজ’এর কৌশল ও সুরক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়েন্ডি হুইটম্যান কোব বলছেন, ‘মঙ্গলে প্রাণের সম্ভাবনাই সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবের দেশটিকে আগ্রহী করে তুলেছে।’

কোব বলছেন, ‘আরব আমিরাতের এই মঙ্গল অভিযানটি আদতে তাদের দেশে হয়নি। তাদের দাবি হোমগ্রাউন্ড স্পেস প্রোগ্রামকে উত্সাহিত করতে মূলত তারা এই মিশনটি ব্যবহার করছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে নভোযানসহ সব কিছু যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করেছে। আর এটিকে উৎক্ষেপণ করেছে জাপান থেকে। কিন্তু তাদের উচিৎ ছিল মহাকাশ গবেষক তৈরির পাশাপাশি ধীরে ধীরে তাদের দেশে স্থাপনা গড়ে তোলা।

ফলে বিষয়টি স্পষ্ট যে মঙ্গল গ্রহ জয় করতে মরিয়া আরব আমিরাত নিজেদের আত্মমর্যাদা প্রকাশের জন্য হয় তড়িঘড়ি এমন অভিযান চালিয়েছে অথবা এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।‘

এনএফ৭১/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top