দুই শিশু থাকবে জাপানি মায়ের জিম্মায়, বাবার আপিল খারিজ
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৩, ২২:৫৯
জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিজের কাছে রাখতে বাংলাদেশী বাবার করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এর ফলে পারিবারিক আদালতের রায় বহাল থাকল। অর্থাৎ ওই দুই শিশু মায়ের কাছেই থাকবে।
ঢাকার পারিবারিক আপিল আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালত এ আদেশ দেন। রোববার জাপানি মায়ের আইনজীবী শিশির মনির ও বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার জানান, আমরা আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিলাম ন্যায়বিচার পাব না। আশঙ্কায় সত্যি হলো। তিনি সেটা প্রমাণ করে দিলেন। তবে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।
গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান বাবা ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে জাপানি বংশোদ্ভুত ওই দুই শিশু মায়ের জিম্মায় থাকবে মর্মে রায় দেন। এ রায়ে সংক্ষুদ্ধ হয়ে আপিল করেন ইমরান শরীফ।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের নাগরিক এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরানের বিয়ে হয়। তাদের তিনটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান।
ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজো) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে আছে। এরপর মেয়েদের ফিরে পেতে একই বছরের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন মা এরিকো। তাদের ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে পৃথক রিট করেন ইমরান।
পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে একই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো; যা চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
এরিকোর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটি (২০২১ সালে শিশুদের বাবার করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপান থেকে আসা দুই শিশু তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে।
তবে শিশুদের বাবা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলে আদেশে বলা হয়। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, মামলার পারিপার্শ্বিক বিষয় ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় তাদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেওয়া যাবে না।
তবে দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে রাজাধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।