রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

তথ্যসচিব কেন ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে, জনতার কৌতূহল

মানুষকে ফাঁসি দিলেওতো একটা ট্রায়াল হয়, কিন্তু জানিনা কেন এ সিদ্ধান্ত: তথ্যসচিব

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৩৮

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেন

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেনকে 'জনস্বার্থে' অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’র ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি হতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তাকে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

বিদায় নেওয়ার আগে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। কেন তাকে অবসরে পাঠানো হলো জানতে চাইলে আজ দুপুরে সচিবালয়ে তিনি বলেন, আমি জানি না আমাকে কেন অবসরে পাঠানো হলো। মানুষকে ফাঁসি দিলেও তো একটা ট্রায়াল হয়। কিন্তু আমি জানি না কোন কারণে এই সিদ্ধান্ত।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করায় তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা লন্ডেনে গিয়েছিলাম মার্চে, একটা টিম নিয়ে। আমাদের প্রেসের দায়িত্বে আছেন আশিকুন্নবি। তার কাছে জিজ্ঞাসা করলে পরিষ্কারভাবে বিষয়টি জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রবাদে আছে, হাতি যখন কাদায় পরে, চামচিকাও লাথি মারে। আমি মার্চে লন্ডন গিয়েছিলাম। এই অভিযোগের বিষয়টি সত্য হলেও সেটা তো মার্চ মাসে হয়েছে। আজ তো অক্টোবর। এতদিন এই প্রশ্ন আসেনি কেন?

মকবুল বলেন, আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না এবং তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।

তার চাকরির মেয়াদে বিএনপি সরকারের আমলেও তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সামনা-সামনি তাদের দেখা হয়নি। তিনি বলেন, তিনি তো মন্ত্রীও ছিলেন না, এমপিও ছিলেন না। টেলিভিশনে তাকে দেখেছি, সেটা তো স্বাভাবিক।

অভিযোগ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আপনাদের তো জানার অনেক পথ আছে। এ ধরনের কোনো বিষয় যদি আপনাদের নলেজে আসে এবং সেটা যদি বস্তুনিষ্ঠ হয়, অবশ্যই তা পত্রিকায় প্রকাশ করবেন। আমি বাংলাদেশের যেখানেই থাকি আমাকে এই প্রশ্ন করবেন যে আপনি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন কি না, ওমক জায়গায় বিএনপির লোকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কি না বা আপনার সংযোগ বিএনপির সঙ্গে আছে।

মকবুল বলেন, শুধু আজ বা কাল নয়, কোনো সময় যদি এমন কোনো সংযোগ আমার সঙ্গে পান, আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন।

নিজের কাজের সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনারা তথ্য সংগ্রহ করেন, আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম কি না। দুর্নীতি ২ রকমের। একটা আর্থিক দুর্নীতি, আরেকটা ইন্টেলেকচুয়াল দুর্নীতি। আপনারা প্রতিদিন এখানে আসবেন। আমি ইন্টেলেকচুয়াল ও আর্থিকভাবে কতটা স্বচ্ছ ছিলাম, কতটা অস্বচ্ছ ছিলাম, তা জানতে পারবেন।

অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করতে পারেন। সরকার বিরোধী কোনো অ্যাক্টিভিটিজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কিনা? যদি থেকে থাকে সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নাই।

এ ব্যাপারে নিজের বক্তব্য কি, প্রশ্ন করা হলে বাধ্যতামূলক অবসর পাওয়া সচিব বলেন, যোগাযোগ নিশ্চয়ই ছিল না। আমার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। যদি ওখানকার এমপিকে জিজ্ঞেস করতেন, আমার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি? তাহলে বেশি ভালো হতো।

মকবুল হোসেন বলেন, তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর বয়স যখন ৯ বছর, তখন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর নিজের বাড়িতে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। যতদিন বেঁচে আছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাঁচব।

তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার নাকি একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আপনি অনেক কাজেই নাকি মন্ত্রীকে অবহিত করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কিছুই শোনা যায়। শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সাথে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি। দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না। আমি উনাকে সম্মান করি।

আমরা চেষ্টা করেছি, অফিস টাইমের পরও সরকারকে সহযোগিতা করতে। এ মন্ত্রণালয়ের মান-সম্মান-ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী ছিলাম। আমি এমন কোনো দিন নেই যে দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করিনি। পথেঘাটে দেখা হবে। সচিবালয়ে দেখা হতে পারে। ভুল-অন্যায় হলে ভুলে যাবেন, ক্ষমা করবেন।

আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার, জনস্বার্থে, প্রয়োজনীয় মনে করলে কোনো কারণ না জানিয়ে তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।

স্বাভাবিকভাবে আগামী বছরের (২০২৩ সাল) ২৫ অক্টোবর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মকবুল হোসেনের। কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই তাকে অবসরে পাঠানো হলো।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, মকবুল হোসেনকে অবসর দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানেন না। তবে অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়টি তিনি জানেন।

এরআগে, ২০২১ সালের ৩১ মে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন মকবুল হোসেন। এর আগে তিনি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মকবুল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top