বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দফা প্রস্তাব, কী সংস্কারের তাগিদ দিলেন তিনি?

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষে তিনি পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে স্পেন ও ইউরোপীয় কাউন্সিল আয়োজিত টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। খবর বাসসের।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একমত যে, বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। বর্তমান রেটিং সিস্টেম অনেক নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধাকে আরও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। তাদের ভোটাধিকার, কোটা এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবিএস) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (আইএফআইএস) প্রতিনিধিত্বের সীমা তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাকেও ক্ষুন্ন করে।

তিনি বলেন, আমরা প্রায়শই আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সগুলোকে ব্যয়বহুল এবং নাগালের বাইরে দেখতে পাই। ঋণের ঝামেলা এড়াতে আমরা উচ্চ-সুদের ঋণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ কখনই এর ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি এবং আমরা সেই রেকর্ড বজায় রাখার আশা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বীকার করি যে, আন্তর্জাতিক ফাইনান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের প্রকৃতি ও পরিধির বিষয়ে এগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।

পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম প্রস্তাব: এমডিবি, আইএফআই এবং বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত এবং তৃতীয় প্রস্তাব: উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প ব্যয়ে, রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন এবং পছন্দসই উচ্চমানের বিপুল পরিমাণে অনুদান এবং সমস্ত ঋণদানের উপকরণগুলোতে দুর্যোগের ধারা থাকতে হবে যাতে দুর্বল দেশগুলো সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে।

চতুর্থ প্রস্তাব: ঋণদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পঞ্চম প্রস্তাব: কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তার সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে। তিনি বলেন, মহামারির ঠিক আগে আমাদের অর্থনীতি ৮.১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং জলবায়ু সংকট আমাদের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য এবং আমাদের উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১.৯ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫.৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।