বিনাদোষে ১৫ মাস জেল খাটলাম

অবশেষে কারামুক্ত হলেন জবি শিক্ষার্থী খাদিজা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খাদিজা। এরপর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হন তিনি। তার বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, সকাল ৯ টার দিকে জেলগেট থেকে বের হয় খাদিজা।

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সুপার শাহজাহান মিয়া বলেন, জামিনের কাগজপত্র কারাগারে আসার পর তা যাচাই-বাছাই করা হয়। সোমবার ভোরে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কোনো স্বজন না আসায় তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছিলেন না। পরে তার বোন আসলে সকাল ৯টার দিকে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি স্বজনদের সাথে কারাগার থেকে বের হয়েছেন।

মুক্তির পর খাদিজা কাশিমপুর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে গণমাধ্যমকে বলেন, আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। বিনাদোষে আমি প্রায় ১৫ মাস জেল খাটলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু আর এখন বলতে চাই না। বলার মতো মনমানসিকতাও আমার নেই।

খাদিজাতুল কুবরা আরও বলেন, কারাগারে খুব বেশি ভালো ছিলাম না। নামাজ পড়ে, রোজা রেখে আর লেখাপড়া করে সময় কাটিয়েছি। আজকে আমার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। এখান থেকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেব। 

গত ১৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ খাদিজাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন। এরপর তার জামিনের আদেশ রোববার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। রাত ১২টা পর্যন্ত তার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা কারা ফটকে অপেক্ষা করলেও মুক্তি মেলেনি। পরে সোমবার সকালে মুক্তি পেলেন তিনি।

এজাহারে বলা হয়েছে, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।

এতে আরও দেখা যায়, সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর দেলোয়ার তাদের ইউটিউব চ্যানেল এবং ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজগুলোতে উল্লিখিত ভিডিওগুলো আপলোড করে বাংলাদেশে চলমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা তাদের মিথ্যা তথ্যপূর্ণ আলোচনা ইউটিউব, ফেসবুকে প্রচার করে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে তাদের সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত করার চেষ্টা করছে।

এ ছাড়া তারা উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করছে। এটা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারার অপরাধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

২০২২ সালে এই দুই মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে পুলিশ। পরে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর সঞ্চালক খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মেজর দেলোয়ার এখনও বিদেশে অবস্থান করছেন।

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top