বড় বড় সাংবাদিকদের কিনে এসেছি, সব থেমে যাবে : লাকী

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪, ১৫:২৫

ছবি: সংগৃহীত

নিজের ছেলে নয় সতিনের ছেলের ছাগলকাণ্ডে পাগল হয়ে পালিয়ে ঈদ করতে হয়েছে নরসিংদির উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীকে। এই ঘটনায় স্বামী মতিউরের সঙ্গে লাকীর বেড়েছে দূরত্ব, সম্পর্কে ধরেছে ফাটল। দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করলেও অবশেষে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে আসলেন প্রকাশ্যে।

নিজের উপজেলা পরিষদের দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দম্ভোক্তি করে বলেন, ঢাকার ও নরসিংদীর জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের বড় বড় সাংবাদিকদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনেই উপজেলা পরিষদে এসেছেন লাকী। তারা আর কিছু করতে পারবে না। নিউজসহ সব থেমে যাবে।

ছাগলকাণ্ডে গা ঢাকা দেওয়া এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী ১৪ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রকাশ্যে আসেন। এদিন তিনি বেলা ১১টায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দুটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন।

তবে সভাকক্ষে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেননি। সভা শেষে কালো রংয়ের পাজেরো জিপে তিনি উপজেলা থেকে বেরিয়ে যান।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িতে ওঠার সময় লাকী দম্ভ করে বলেন, পাছে লোকে কিছু বলে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। 

স্বামীর মতো লাকীও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাকী বর্তমানে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

স্থানীয়রা জানান, চিহ্নিত রাজাকার আব্দুল কাদিরের নাতনি এই লাকী। তিনি এখন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। রাজাকার ও বিএনপি পরিবারের সন্তান হয়ে কীভাবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হলেন তা নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে আলোচনা রয়েছে।

মতিউরের স্ত্রী লাকীর অঢেল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলেও আয়কর নথিতে তার মাত্র ১২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য আছে। বিপরীতে তিনি ২ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন। তাকে পাজেরো, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জরোভার মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা গেলেও আয়কর নথিতে তার নামে কোনো গাড়ির তথ্য নেই। তবে গাড়ির বিপরীতে মাত্র পৌনে তিন লাখ টাকার সম্পদ মূল্য দেখিয়েছেন তিনি।

গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নরসিংদীর গ্রামে বিশাল প্রাসাদোপম বাড়ি আছে লাকীর। ট্রিপ্লেক্স (তিন তলা) বাড়িটিতে একাধিক বিশালাকৃত্রির ড্রইংরুম ও ডজনখানেকের বেশি অভিজাত শয়নকক্ষ রয়েছে।

অথচ এই বাড়ির কোনো তথ্য তার আয়কর ফাইলে নেই। তবে বাড়ির ফার্নিচার ক্রয় বাবদ মাত্র ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। নরসিংদীতে দেড় একর জমি তিনি হেবামূলে পেয়েছেন। এ কারণে এই জমির কোনো দাম উল্লেখ নেই। মিরপুর এলাকার একটি অত্যাধুনিক ভবনে চারটি ফ্ল্যাটের মালিক লাকী। এগুলোও তিনি হেবাসূত্রে পেয়েছেন বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, তিতুমীর কলেজের একজন সাধারণ শিক্ষক থেকে রাতারাতি রাজনীতির মাঠে নেমে সাড়া ফেলে দেন লাকী। স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার (সাবেক মন্ত্রী) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। নেতার সঙ্গে সম্পর্কের পাশাপাশি স্বামী মতিউরের অবৈধ টাকার জোরেই রাজনীতির ময়দানে তিনি জায়গা করে নেন।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top