সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান জাতীয় কৌতুক ছাড়া কিছু নয়
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২৪, ১৮:২১
আজকাল সংবাদপত্রে দৃষ্টি দিলেই বেনজীর, মতিউর, আসাদুজ্জামান আরও কত নাম আমরা দেখতে পাচ্ছি। এসব দুর্নীতির মহানায়করা সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বড় বড় সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকলো কীভাবে? এর উত্তর কি প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন? তাহলে কি কোনো ভাগ-বাটোয়ারার কারণে সমস্যা হওয়ায় এসব নিষ্ঠুর পুলিশ কর্মকর্তাদের সব গোপন বিষয় ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে? আসলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জাতীয় কৌতুক ছাড়া কিছু নয়।
বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে জেলাভিত্তিক সমাবেশ চলাকালে নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দাও জানান তিনি।
রিজভী বলেন, দুদকের কোনো শক্ত মেরুদণ্ড নেই। কিন্তু সরকারের নির্দেশমতো বিরোধীদলকে নির্যাতন করা আওয়ামী-দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ। তা না হলে গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লুটপাটের সরকার যে অনিয়ম, অপচয় এবং মহাদুর্নীতিকে দুর্নীতি দমন কমিশন কারপেটের তলায় ঢেকে রাখে, সেই কমিশনারদের দ্বারা পুলিশ এবং সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হবে বলে জনগণ বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, পর্দাকাণ্ড, বালিশকাণ্ডে থেকে শুরু করে মতিউরকাণ্ড পর্যন্ত অসংখ্য কাণ্ড-কারখানা এবং পাচারকৃত লুটের টাকার অনুসন্ধানে উদাসীনতা দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জনগণ দেখে আসছে। অথচ দুদক ‘রিপ ভ্যান উইংক্যাল’ এর মতো ঘুমিয়ে থেকেছে। জনগণের টাকার একচেটিয়া লুণ্ঠন ও আত্মসাৎকারীদের ডামি আওয়ামী সরকার মাফ করে দিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজিজ, বেনজীরের মতো ব্যক্তি, যারা নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী জনগণের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে নিজ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, বন্দুক দেওয়া হয় কি ঘরে রাখার জন্য?
অর্থাৎ দেশের সাধারণ নাগরিকদের নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের আন্দোলনকে কোনো প্রকার মানবতার তোয়াক্কা না করে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করার পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনার আশীর্বাদে তারা বিত্ত-বৈভবে প্রকাণ্ড স্ফীত হয়ে উঠেছিল। আলিশান বাড়ি, অসংখ্য ফ্ল্যাট, শত শত একর জমি তারা দখন করেছিল আন্দোলন দমনের কৃতিত্ব হিসেবে।
রিজভী বলেন, ট্রানজিট ও এশিয়ান হাইওয়ের নামে শেখ হাসিনা মূলত ভারতকে করিডোর দিচ্ছেন। চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর অভিসন্ধি। রেলওয়ে করিডোর স্থাপনের চুক্তি তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশের মানুষ কখনই দিল্লির অধীনতা বশ্যতা মানেনি এবং ভবিষ্যতেও মানবে না। অসংখ্য আত্মাহুতি দিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা, তাই এই স্বাধীনতাকে দুর্বল করা যাবে না। বিএনপির শাসনামলে কোনো ট্রানজিট আদায় করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভারতের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশ এবং জনগণের প্রতি তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যিক ভারসাম্যসহ নানান সমস্যা সমাধানে আগ্রহী নয় তারা।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের বুকচিরে রেললাইন স্থাপন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করার সামিল। শেখ হাসিনা বলেছেন ইউরোপে তো কোনো বর্ডার নেই, তারা কি বিক্রি হয়ে গেছে?
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো তো কাছাকাছি অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং একই বর্ণের দেশ। কিন্তু তুরস্ককে নেওয়া হয়নি কেন? ইউরোপের শেনজেনের অন্তর্ভুক্ত দেশ যাদের অভিন্ন মুদ্রা, ভিসা ছাড়াই গমনাগমন, বিচার ব্যবস্থাসহ এবং চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
কিন্তু বেশকিছু পূর্ব ইউরোপের দেশ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। বিভিন্ন ইনডেক্স একই রকম নয়। তাই জনগণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতকে রেল করিডোর সুবিধা প্রদানের চুক্তি বাংলাদেশের ভুখণ্ড দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র, সৈন্য প্রেরণ করতে সক্ষম হবে। ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পতিত হবে। বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই চুক্তি তারা কোনো দিনই মেনে নেবে না।’ যোগ করেন তিনি।
রিজভী আরও বলেন, গত সোমবার থেকে সারাদেশের সব মহানগর এবং আজ সারাদেশের সব জেলা শহরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের চিরাচরিত চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হিংস্র আক্রমণ চালিয়েছে। ব্যর্থ আওয়ামী সরকার পুনরায় গুমের মতো নৃশংস পন্থা অবলম্বন করে আবারও জনমনে ভীতি তৈরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।