যে কারণে মতিয়া চৌধুরীকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলা হয়

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৪

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বর্ণাক্ষরে যাদের নাম লেখা থাকবে তাদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী অন্যতম। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া প্রবীণ এই রাজনীতিক আদর্শের রাজনীতি করেছেন সারা জীবন। রাজপথে তার বিচরণ সব সময়ই চোখে পড়েছে। মতিয়া চৌধুরী রাজনৈতিক অঙ্গনে অগ্নিকন্যা নামে পরিচিত।

মতিয়া চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। তিনদিন আগে হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিলো। আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।এরপর বেলা ১ টার দিকে তিনি মারা যান বলে তার একজন সহকারী জানিয়েছেন।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল তৎকালীন ছাত্রনেতা মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’।সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন অগ্নিকন্যাখ্যাত মতিয়া। তবুও তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাননি।

১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে মার খেয়েছেন মতিয়া চৌধুরী; এ কারণে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার আস্থার পাত্রে পরিণত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বারবার মূল্যায়িত হন মতিয়া। তিনি হাসিনা সরকারে তিন বার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।

রাজনৈতিক জীবন

বাম ধারার রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ত্রিশে জুন পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি শেরপুর-২ আসন থেকে ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সর্বশেষ সংসদের উপনেতা ছিলেন।

ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে উত্থান মতিয়ার। ঢাকার ইডেন কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন মতিয়া। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকার জন্য তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেছিলেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন মতিয়া চৌধুরী। পরে কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭১ সালে ওই দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক সময় তাকে দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।

পাকিস্তান বিরোধী সংগ্রামকালে ও পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসনামলে অনেকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি তিন বার কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

মতিয়া চৌধুরী ১৯৯১ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী মরহুম জাহেদ আলী চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন তিনি।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে জাহেদ আলী চৌধুরীকে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং সবশেষ ২০২৪-এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মতিয়া চৌধুরী; যদিও এসব নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের ১ নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সারাজীবনই সাধারণ বেশভূষা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। সূত্র: যুগান্তর



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top