একটি কলঙ্কিত প্রশ্ন, একটি ঐতিহাসিক জবাব, ১৪ জুলাই
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:৪০

১৪ জুলাই—একটি শব্দ, একটি স্লোগান, একটি ক্ষোভের দিন। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই—বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। কোটা সংস্কারের দাবিতে যখন দেশজুড়ে উত্তাল আন্দোলন, তখনই সেই বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ছুড়ে দেন এক প্রশ্ন—মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?
এই এক কথাতেই আগুন লাগে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে রাতেই বের হয় টানা মিছিল। স্লোগানে গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ—আমি কে, তুমি কে? রাজাকার রাজাকার! কে বলেছে, কে বলেছে? সরকার সরকার!
এই আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল জুন মাসে, যখন সরকার ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা ব্যবস্থা ফেরত আনে। তখন থেকেই ছাত্রজনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার বক্তব্যে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়—এইবার দাবি শুধু কোটা সংস্কার নয়, সম্মানের প্রশ্ন।
প্রতিবাদ শুধু ঢাকায় নয়—দেশের প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে গণপদযাত্রা, বিক্ষোভ, এবং স্মারকলিপি কর্মসূচি। ১৪ জুলাই-ই, ছাত্ররা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেয়, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় সংসদ অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে। একইদিন, ছাত্রলীগের দুই নেতা পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে।
শেখ হাসিনার ভাষা বদলেছে ছাত্রদের চোখে তার পরিচয়। ‘রাজাকার’ শব্দ, যা এক সময় শত্রুর পরিচয় ছিল, আজ পরিণত হলো সরকারের সমার্থকে। কেননা একবিংশ শতাব্দীতে, যখন ছাত্ররা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন তাদের রাজাকার তকমা দেওয়া হয়!
এই দিন, এই ১৪ জুলাই—আর শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি প্রতিরোধের নাম, একটি গণআন্দোলনের নতুন সংজ্ঞা। তারা কোটা চেয়েছিল না, তারা চেয়েছিল ন্যায্যতা। আর আজ—ইতিহাসে তাদের নাম লেখা হয়ে গেছে সাহসের অক্ষরে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।