তিন হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০০

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আমদানিকারক থেকে শুরু করে সিঅ্যান্ডএফ (C&F) এজেন্ট—সবাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ না হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, আগুনে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে শুরু করে ওষুধের কাঁচামাল, বন্ডেড কাঁচামাল, কেমিক্যাল পণ্য, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী সব কিছুই আগুনে ছাই হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার ব্যবসায়ী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; ছোট অনেক আমদানিকারক প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের কুরিয়ার গোডাউনে আগুন লাগে। কুরিয়ারের পাশেই ছিল রাসায়নিক পণ্য সংরক্ষণের গুদাম। ওই গুদামে কেমিক্যালের পাশাপাশি মোবাইলের এলসিডি, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশসহ দাহ্য পণ্য মজুদ ছিল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বন্ডেড পণ্যের কাঁচামাল সংরক্ষিত গুদামও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শনিবার হওয়ায় অনেক আমদানিকারক বৃহস্পতিবার রাজস্ব পরিশোধ করলেও পণ্য খালাস নিতে পারেননি। শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় এই সময়ে কার্গো ভিলেজে সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পণ্য মজুদ থাকে। কাস্টম হাউস সংশ্লিষ্টদের মতে, এ কারণেই ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি হয়েছে।
ঢাকা কাস্টম হাউস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন কালবেলা বলেন,
“কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় সবকিছুই পুড়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, কেমিক্যাল, বন্ডেড কাঁচামাল—সব ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক রপ্তানিকারক দ্রুত শিপমেন্টের জন্য বাড়তি খরচ দিয়ে এয়ারকার্গো ব্যবহার করেন, সেই সব মূল্যবান পণ্যও পুড়ে গেছে। ওষুধের কাঁচামালও এর মধ্যে রয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে।”
ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পূর্ণদমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকলেও শনিবার দুপুর পর্যন্ত সীমিত খালাস কার্যক্রম থাকে। এই সময়ে সপ্তাহজুড়ে আসা কার্গো ফ্লাইটের পণ্য জমে থাকে কার্গো ভিলেজে। ফলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় শনিবার পণ্যের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি ছিল।
ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে মূলত আকাশপথে পণ্য আসে। সাগরপথের তুলনায় আকাশপথে পরিবহন ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সাধারণত জরুরি বা মূল্যবান পণ্যই এ পথে আনেন। এই ঘটনায় অনেক ছোট আমদানিকারক সম্পূর্ণরূপে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানিকারক জাহাঙ্গীর আলম বলেন,
“আমার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ৪৮৬ কার্টন ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এই চালানের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা শুল্কও পরিশোধ করেছি। এক আগুনে সব শেষ হয়ে গেল।”
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার পণ্য ও নথিপত্র পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত ও ক্ষয়ক্ষতির আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন কাজ শুরু করেছে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।