মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২

শিশু অধিকার ও সুরক্ষা বর্তমানে বড় সংকট

আহসান সাকিব হাসান | প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:০৭

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও সুরক্ষার বর্তমান চিত্র তুলে ধরতে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে “শিশু অধিকার পরিস্থিতি উপস্থাপন শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে লাল সবুজ সোসাইটি এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (MJF)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিতান কুমার মণ্ডল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক আকিব উদ্দিন, জেলা পরিসংখ্যান উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন, রূপান্তর( এনজিও) নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, 

রূপান্তরের প্রজেক্ট অফিসার সাকি রেজওয়ানা। পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর প্রতিনিধি কর্মকর্তা সহ সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, গবেষক, তরুণ সমাজকর্মী ও নাগরিক সমাজের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

 

 

আলোচনা সভায় লাল সবুজ সোসাইটির প্রতিনিধিত্ব করে বিস্তারিত তুলে ধরেন আহসান সাকিব, যেখানে শিশু অধিকার পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়। জানুয়ারি থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত দেশের ১২টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত শিশু বিষয়ক সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিশু সুরক্ষার সবচেয়ে বড় হুমকি অনিরাপদ পরিবেশ, সহিংসতা ও শোষণ, যা মোট ঘটনার ২৫%-এরও বেশি।

 

মোট ১,২৮৯টি সংবাদ বিশ্লেষণের মধ্যে, ১০৬৯টি নেতিবাচক সংবাদ, এবং ২২০টি ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

 

প্রধান তিনটি ঝুঁকি হলো, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা – ৩৭.৬১% (৪০২ জন) দুর্ঘটনায় মৃত্যু – ১৫.৯৬% স্বাস্থ্য বৈষম্য ও নিপীড়ন – ৪৬.৪৩%

 

ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক সংখ্যক ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে, যা শিশু সুরক্ষায় নগর-গ্রামের বৈষম্যকে স্পষ্ট করে।

 

শিশু সুরক্ষা বিষয়ক ২২০টি ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক উদ্যোগ দেখা গেছে শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধ (১০.৯%) ক্ষেত্রে। জনকণ্ঠ পত্রিকা সর্বাধিক ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে শিশু সুরক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

 

প্রতিবেদনের মূল বার্তা “শিশু নির্যাতন ও দুর্ঘটনা বর্তমানে সবচেয়ে বড় হুমকি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় কাঠামোগত দুর্বলতা রয়ে গেছে। মিডিয়া সচেতনতা বাড়লেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি এখনো প্রকট।

 

রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা ও আইন প্রয়োগে ঘাটতির বিষয়টিও প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। নীতি নির্ধারকদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। শিশু সুরক্ষা ও তদারকি কাঠামো শক্তিশালী করা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবায় সমতা নিশ্চিত করা। মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা আরও উৎসাহিত করা। আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করা।

 

এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নেতিবাচক ঘটনার অনেক ক্ষেত্রেই বিভাগীয় তথ্য অনুপস্থিত, যা আঞ্চলিক পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

 

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, “শিশুদের নিরাপত্তা দয়ার নয়, এটি তাদের মৌলিক অধিকার। অরক্ষিত শৈশব সমাজের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্র, পরিবার ও সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

 

অতিথিদের বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বলেন, 

শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং স্বাস্থ্যখাতের আন্তঃসম্পর্ক জোরদার করা জরুরি।

 

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সর্বসম্মতভাবে মত দেন—

শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত সামাজিক দায়িত্ব।

 

প্রকল্পের অগ্রগতি অবহিত করেন সেফ প্রজেক্ট এর প্রজেক্ট অফিসার তানভীর হাসান অনন তিনি বলেন, শিশু সুরক্ষায় খুলনার কয়রা উপজেলার নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করেছি। আমার মনে হয়, সামাজিক সচেতনতা জরুরি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিশু শ্রম ও শিশুদের পরিবারের সাথে সচেতনতামূলক সভা করা হয়। পাশাপাশি নয়টি স্কুলে শিশু সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয় এবং শিশু মেলা করা হয়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top