রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্পে গ্যাস লাইনের বিপদ: ঢাকা কি মৃত্যুপুরী হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৪

সংগৃহীত

ঢাকা এখন বহুমুখী ঝুঁকির মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্প হলে কেবল দুর্বল ভবন নয়, ঢাকার মাটির নিচে থাকা গ্যাস নেটওয়ার্কও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ কীভাবে হয়, আর এই প্রক্রিয়ায় কতটা ঝুঁকি রয়েছে?

চলুন জেনে আসি, বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ পদ্ধতিটা কেমন। গ্যাসের উৎস (ক্ষেত্র) থেকে উচ্চচাপের মেইন ট্রান্সমিশন লাইনে গ্যাস আসে। এরপর বিতরণ কোম্পানিগুলো সিটি গেট স্টেশন বা মিটারিং স্টেশনে (যাকে অনেকে ‘গ্যাস চেম্বার’ বলেন) সেই চাপ কমিয়ে দেয়। এরপর তা শহরের মূল বিতরণ পাইপলাইন দিয়ে সরাসরি আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগে পৌঁছায়। সাধারণত, এই বিতরণ লাইনগুলো মাটির নিচ দিয়েই বাসাবাড়ির পর্যন্ত নেওয়া হয়।

বিপদের কারণও আছে। প্রধান কারণ হলো: বাংলাদেশের অধিকাংশ আবাসিক গ্যাস বিতরণ লাইন অত্যন্ত পুরোনো, অনেক ক্ষেত্রে ক্ষয়প্রাপ্ত এবং লোহার তৈরি। এই লাইনগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মাটির নিচ দিয়ে গেছে। বিল্ডিং কোড না মেনে অপরিকল্পিতভাবে খনন ও নির্মাণকাজের ফলে এই লাইনগুলো সব সময়ই ঝুঁকিতে থাকে। সামান্য ঝাঁকুনি বা মাটির অসমান চাপে এই লাইনগুলো ফেটে যেতে পারে।

অন্যান্য দেশের নিয়ম ও প্রযুক্তিটা কী তাহলে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে (যেমন জাপান, নিউজিল্যান্ড) গ্যাস বিতরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উচ্চমানের নমনীয় পলিথিন পাইপ ব্যবহার করা হয়, যা ভূকম্পন সহ্য করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: তারা বাধ্যতামূলকভাবে স্বয়ংক্রিয় শাট-অফ ভালভ স্থাপন করে। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভালভগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি এখনও সেভাবে চালু হয়নি।

এর সঙ্গে আছে ভূমিকম্পের চূড়ান্ত পরিণতির ভয়। যদি ভূমিকম্পে বিল্ডিং ধসে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় এবং গ্যাস লাইন ফেটে যায়, তবে গ্যাস লিক হতে থাকবে। ধসে যাওয়া বিদ্যুতের তার বা অন্য কোনো ঘর্ষণে সামান্য স্পার্ক হলেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ ঘটবে। রাস্তা বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দ্রুত পৌঁছাতে পারবে না। ফরে, পুরো ঢাকা নগরী ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের শিকার হতে পারে। এখনই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো জরুরি।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top