বিশ্ব খাদ্য দিবস: এখনো ক্ষুধার ‘গুরুতর মাত্রা’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২০, ২০:০২
জান্নাত শ্রাবণী
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতা মানুষের হৃদয় থেকে রূপ ও সৌন্দর্যের নান্দনিক বোধগুলোকে নিমিষেই ধ্বংস করে দেয়। ক্ষুধার তীব্রতায় জ্যোৎস্নায় পরিপূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদকে তখন মায়াবী মনে হয় না, মনে হয় একটুকরো ঝলসানো রুটি। চাঁদের সৌন্দর্যে ক্ষুধার্ত মানুষ বিন্দুমাত্র আকর্ষণ বোধ করে না। জীবনের সব ভালোলাগা, আবেগ, রূপ, ছন্দ ক্ষুধার কাছে পরাজিত হয়, হারিয়ে যায় ক্ষুধার্ত মানুষটির সামনে থেকে।
বিশ্বের ১১টি দেশের মানুষ এখনো ‘ভীতিকর মাত্রার’ অনাহারে ভুগছে। আর ‘গুরুতর মাত্রার’ অনাহারে ভুগছে বাংলাদেশসহ ৪০টি দেশের মানুষ। এমন চিত্র উঠে এসেছে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (জিএইচআই)-২০২০’ এ। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রতিষ্ঠার স্মরণে প্রতি বছর দিনটি বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯৮১ সনে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা আর প্রতিপাদ্য নিয়ে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো_ ‘সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে বিকশিত হোন, শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ’।(Grow, nourish, and sustain ~together with nature).
এ বছরের সূচকে ৭৫তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের স্কোর ২০.৪। বাংলাদেশ ক্ষুধার ‘গুরুতর মাত্রা’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। গত বছরের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮তম।
ক্ষুধার হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে জাতিসংঘ ২০৩০ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে, তা পূরণ করার জন্য আর মাত্র ১০ বছর বাকি আছে। এমন অবস্থায় সবার জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ দ্বিগুণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে ক্ষুধা সূচকের প্রতিবেদনে।
ইউনিসেফের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ মহামারীর আর্থসামাজিক প্রভাবের কারণে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী বাড়তি ৩৯ লাখ শিশু তীব্র রুগ্ণতার শিকার হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়তে পারে। দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ৬৭ লাখ শিশু তীব্র রুগ্ণতার শিকার হতে পারে এবং এর অর্ধেকেরও বেশি (৫৮ শতাংশ বা ৩৯ লাখ) হতে পারে শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই।
একটা সময় ছিলো যখন বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারতোনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুর্ভিক্ষে সরকারি হিসেবে প্রাণ হারিয়েছিলো ২৭ হাজার বেশি মানুষ। যদিও বেসরকারি পরিসংখ্যান বলছে, স্মরণকালের ভয়াবহ ওই দুর্ভিক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রাণ হারায় ১ সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ।
তবে সেই দু:সময় কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। কৃষির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেয়া নানামুখি পদক্ষেপের কারণে সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। প্রতিবছর বাংলাদেশের উৎপাদন ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬২ হাজার টন।
একথা অনস্বীকার্য, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন হলে দারিদ্র্যবিমোচন হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ খাদ্য নিয়ে বেশ সচেষ্ট। শুধুমাত্র খাদ্যাভাবের কারণে সরকার পতনের নজিরও রয়েছে বিশ্বে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে ধান গম ছাড়াও অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ টন মাছ, মাংস, ডিম, ফল-মূল, শাকসবজি জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এ ভয়াবহ পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যাচ্ছে প্রচলিত কৃষি বাদেও আমাদের আরও কিছু করতে হবে। এজন্য শুধু মাঠ ফসলের দিকে তাকিয়ে না থেকে পারিবারিক কৃষির দিকেও নজর দিতে হবে।
এনএফ/এমকে/২০২০
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।