ঘুষের টাকায় স্ত্রীর নামে সম্পদ গড়েন ওসি প্রদীপ
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ২৪ আগষ্ট ২০২০, ১২:৫৯
![ফাইল ছবি: ওসি প্রদীপ](https://newsflash71.com/uploads/2020/08/oc-b-20200808045643-1-300x203.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা। নিউজফ্ল্যাশ৭১
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি দাশকে তার বাবা চট্টগ্রাম শহরের ছয় তলা একটি বাড়ি দানপত্র করে দেন। তবে দুদকের অনুসন্ধান বলছে, প্রদীপ প্রথমে বাড়িটি শ্বশুরের নামে কিনে আবার স্ত্রীর নামে ফেরত নিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ‘অবৈধ অর্থ বৈধ’ করার এমন চিত্র উঠে এসেছে। ‘ঘুষ-দুর্নীতির‘ অর্থে কীভাবে তিনি স্ত্রীর নামে বিভিন্ন সম্পদ গড়েছেন, তা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, প্রদীপ তার স্ত্রীকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে ‘অবৈধ সম্পদ বৈধ’ করার চেষ্টা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটি করেন রোববার। মামলায় চুমকির নামে প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, আসামি চুমকি ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালির পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি তার বাবা দানপত্র দলিল করে দিয়েছে বলে ঘোষণা দেন।
এজাহারে বলা হয়, “চুমকির পিতা বাড়িটি দানপত্র করে দিলেও তার অন্য দুই ভাই ও এক বোনকে কোনো বাড়ি দান করেননি। অথচ তার দুই ছেলের নামে উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদও নেই। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ গোপন করতে তার শ্বশুরের নামে বাড়ি নির্মাণ করে পরে তার স্ত্রীর নামে দানপত্র করে নিয়ে ভোগ দখল করছেন।”
২০০৪ সালে সিএমপির কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) থাকাকালে পাথরঘাটা এলাকায় জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে সাময়িকভাবে বরখাস্তও হন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সৎ বোনের সম্পত্তি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কক্সবাজার সদর থানায়ও একটি জায়গা দখল করায় বিভাগীয় মামলা হয় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। কক্সবাজারে নিরীহ মানুষকে মাদক পাচার, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে অর্থ নেওয়ার অনেক অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
দুদকের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চুমকি একজন গৃহিনী হলেও তাকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে সম্পদের মালিক হচ্ছিলেন।
“চুমকি কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ অর্থ বছর প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। পরবর্তীতে মৎস্য ব্যবসা ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে চুমকির নামে কোনো কমিশন ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।”
এছাড়া ২০১৩ সাল পর্যন্ত চুমকি মৎস্য ব্যবসা থেকে দেড় কোটি টাকা আয়ের হিসাব আয়কর বিবরণিতে উল্লেখ করেন। এর সপক্ষে ২০০২ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পাঁচটি পুকুর নগদ সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় ১০ বছরের জন্য ইজারা নেওয়ার চুক্তিপত্র দুদকে দাখিল করেন।
“কিন্তু দুদক যাচাই করে দেখে, চুমকি একজন গৃহিনী এবং তার স্বামী ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ১৯৯৫ সালে এসআই হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০০২ সালে তার বা তার স্বামীর ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় ছিল না।”
এছাড়া প্রদীপের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে মৎস্য ব্যবসা সম্পর্কিত কোনো লেনদেন না পাওয়ার কথাও মামলায় উল্লেখ করেছে দুদক।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।