ভাইরাল সেই ওয়াহিদের নেই কোনো মেয়ে ,নেশাগ্রস্ত হওয়ায় থাকেনি দুই স্ত্রী !

ফারহানা মির্জা | প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪২

ছবি : সংগৃহীত

মেয়ের বিয়ের কথা বলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টাকা তুলতেন। মানুষের কাছে কান্নাকাটি করে তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরতেন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ব্যক্তির নাম পরিচয় মিলেছে। মানুষের আবেগ আর ভালবাসার সুযোগ নিয়ে টাকা তুলে নেশা করতেন তিনি। আসলে তার কোনো মেয়ে নেই। এলাকায় প্রতারক ও নেশাগ্রস্থ হিসেবে পরিচিত ওয়াহিদ।

তার আসল নাম ওয়াহিদ মোল্লা। পাবনার বেড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পাইখন্দ গ্রামের মৃত বাহের উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে তিনি। তারা সাত ভাই ও দুই বোন। ১১ বছর আগে তার বাবা এবং ২০ বছর আগে তার মা নূর খাতুন মারা যান।

ওয়াহিদ মোল্লা ছোট বেলা থেকেই নাকি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তার নেশা ও প্রতারণার কারণে তার দুই স্ত্রীও তাকে তালাক দেয়। প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যাওয়ার ছয় মাস পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীও তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে যায়। এরপর বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন ওয়াহিদ।

গেলো রোববার (৫ নভেম্বর) পাবনার বেড়া পৌরসভার পাইখন্দতে এলাকাবাসীর কাছে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওয়াহিদের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৮ বছর পূর্বে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান ওয়াহিদ। এরমধ্যে দু’একদিন বাড়ি আসলে রাতটুকু থাকতেন তিনি। সর্বশেষ ৭ বছর আগে বাড়িতে এসেছিলেন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২ শতাংশ জমি বিক্রি করার জন্য। সেইদিনই আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকায় ফিরে যায়। এরপর আর বাড়িতে ফেরেননি তিনি।

জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে বেড়া পৌরসভার পায়না গ্রামে প্রথম বিয়ে দেয়া হয় তার। বিয়ের দেড় বছর পর একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয় তাদের। নেশাগ্রস্ত ও প্রতারক হওয়ায় স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়।

ভাইরাল হওয়া ওয়াহিদের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই সে অন্যরকম ছিল। স্কুলে দিয়ে আসতাম সেখান থেকে পালিয়ে কোথাও চলে যেতো। কোনভাবেই পড়াশোনা করাতে পারিনি। এরপর যখন একটু বড় হলো তখন এলাকা থেকে ভ্যান ভাড়া করে টাকা উপার্জনের জন্য দিতাম। সেই ভ্যান বাজারে নিয়ে বিক্রি করে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতো।

কিছুদিন পর আবার বাড়িতে ফিরে আসতো। এরপর আবারও একটি ভ্যানগাড়ি কিনে দেয়া হলো সেটিও সে বিক্রি করে চলে যায়। এরপর বাবার সঙ্গে ভাঙরির ব্যবসায় পাঠালাম। ভাঙরির মালামাল কিনে দিয়ে গ্রামে পাঠাতাম বিক্রির জন্য। সেগুলোও সে মানুষের কাছে বিক্রি না করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে পালিয়ে যেতো।

তিনি আরও বলেন, নেশাগ্রস্ত হওয়ায় তার দুই স্ত্রী-ই তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। তারা গাজীপুরে কাজকর্ম করে জীবনযাপন করে। নিরুদ্দেশ হলে আর বাড়ি ফিরে আসেনি ওয়াহিদ। ৭ বছর আগে একবার বাড়িতে আসছিল। এখন আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আমরা বিষয়টি জানতে পারি।

মূলত সে গ্রামের কিছু খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে সিগারেট খেতে খেতে বড় ধরণের নেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। জেনেছি, বর্তমানে ঢাকার মিরপুরের হযরত শাহ আলীর মাজারে অধিকাংশ দিন থাকে। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করে। মাঝেমধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও মাওনায় দিন অতিবাহিত করে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়- অসহায় এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দরকার বলে জানাচ্ছেন। ভিডিওতে তিনি সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা বলেও পরিচয় দিয়েছেন। ঢাকার এক আত্মীয়র কাছে টাকা চেয়ে শূন্য হাতে ফিরেছেন জানালে মানবিকতা দেখিয়ে ভিডিও করা ব্যক্তি তাকে ৬ হাজার টাকা দেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top