র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশের রাখসান্দ
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০০
জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাখসান্দ এশিয়ার নোবেলখ্যাত র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন। এ বছর এই পুরষ্কার প্রবর্তনের ৬৫তম বার্ষিকীতে করভিকে “উদীয়মান নেতা” হিসেবে এই স্বীকৃতি দিয়েছে র্যামন ম্যাগসাইসাই কর্তৃপক্ষ। এবারের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন আরও তিনজন। তারা হলেন- ভারতের রবি কান্নান আর, পূর্ব তিমুরের ইগুয়েনিও লেমোস ও ফিলিপাইনের মিরিয়াম করোনেল-ফেরের।
র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে করভি রাখসান্দ সম্পর্কে বলা হয়েছে, করভী রাখসান্দ বাংলাদেশের সর্বজনীন মানসম্মত শিক্ষার বিকাশে একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি। তিনি নিজ দেশের তরুণদের মধ্য সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় করভি রাখসান্দ বলেন, এ পুরস্কার বা এই সম্মাননা শুধু আমার একার নয়; এ দীর্ঘ পথচলায় যারা আমার সঙ্গে ছিল সবাই এটার দাবিদার। আমরা আবার প্রমাণ করলাম তরুণরা কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েই থেমে থাকে না, তারা বাস্তবায়ন করেও দেখাতে পারে। তিনি বলেন, আমরা ২০০৭ সাল থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে আসছি। শিক্ষামূলক কার্যক্রমে ক্রমান্বয়ে আমাদের পরিধি আরও বেড়েছে। এ পুরস্কার আমাদের জন্য একটি বড় স্বীকৃতি। এটি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।
২০০৭ সালের ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু“করে জাগো ফাউন্ডেশনের। বয়স যখন মাত্র ২১ বছর। তখন রায়ের বাজার বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ১৭ শিশুকে নিয়ে শুরু“করেন ক্লাস। আর গড়ে উঠল জাগো ফাউন্ডেশন। দরিদ্র শিশুদের মুখে একটু হাঁসি ফুটানোর জন্য গড়ে তুলেছেন ‘জাগো ফাউন্ডেশন।’
মাত্র সাতজন ভলান্টিয়ার ও ১৭জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু নিয়ে জাগোর পথচলা শুরু। সেই পথ চলার সঙ্গী এখন অনেক। ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে পড়াচ্ছে জাগো ফাউন্ডেশন। শুধু তাই না সবার সহায়তায় শিক্ষার্থীদের ফ্রি শিক্ষা উপকরণও দেওয়া হয়।এছাড়াও জাগোর প্রচলিত ধারার তিনটি স্কুলও রয়েছে, যেখানে দেশের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর শিশুরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গুণগত মানসম্মত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সুশিক্ষিত ও দায়িত্বশীল সুনাগরিকে পরিণত হচ্ছে।
প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ভেতরে থাকা শিশুদের শিক্ষা পৌঁছে দেয়া সম্ভব- এই ধারণা থেকে শুরু হয় ‘অনলাইন স্কুল’। করভি রাখসান্দের নেতৃত্বে জাগো ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) প্রোগ্রাম শুরু করে। বর্তমানে এ প্রোগ্রামের অধীনে ৫০ হাজার লিডার সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের স্মরণে দেওয়া হয় র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পুরস্কার। জনসেবা থেকে শুরু করে সামাজিক উদ্ভাবনের মতো বিভিন্ন খাতে এশিয়ার যারা নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও আত্মোৎসর্গকারী মানসিকতা নিয়ে এশিয়ান সমাজে ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দেয়া হয়।
১৯৫৭ সালে মাত্র ৫০ বছর বয়সে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাই। পরের বছর ১৯৫৮ সাল থেকেই তার নামে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ৩১ আগস্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের জন্মদিন হওয়ায় প্রতিবছর এই দিনটিতেই ম্যানিলা থেকে এ পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগে, এশিয়ার নোবেলখ্যাত এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন আরও ১২ বাংলাদেশি। তারা হলেন-সমাজসেবী তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ (১৯৭৮), ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ (১৯৮০), গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (১৯৮৪), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৮৫), ক্যাথলিক ধর্মযাজক রিচার্ড উইলিয়াম টিম (১৯৮৭), দিদার কমপ্রিহেন্সিভ ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইয়াসিন (১৯৮৮), বেসরকারি সংগঠন বাঁচতে শেখার প্রতিষ্ঠাতা অ্যাঞ্জেলা গোমেজ (১৯৯৯), বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (২০০৪), প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান (২০০৫), বেসরকারি সংগঠন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান (২০১০), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (২০১২) ও বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী (২০২১)।
সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের জন্য করভি রাখসান্দ আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১০ সালে মোজাইক ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড; ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড; ২০১৭ সালে অ্যান্ড্রু ই রাইস অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড; ২০২১ সালে কমনওয়েলথ পয়েন্ট অফ লাইট অ্যাওয়ার্ড; ২০২২ সালে শেখ হাসিনা যুব স্বেচ্ছাসেবক পুরস্কার- রয়েছে তার প্রাপ্তির তালিকায়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।