মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন আজ, জেনে নিন কেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল?
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৩৬

অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধী) ১৫৪তম জন্মদিন আজ । ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর ভারতের গুজরাট রাজ্যের পরবনদারে তার জন্ম । ভক্তরা ‘মহাত্মা' এবং ‘বাপু' নামে ডাকতেন গান্ধীকে ৷ তবে সরকারিভাবে তাঁকে ‘জাতির জনক' খেতাব দেওয়া হয় ৷ মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনটিকে অহিংসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ ।
১৯১৫ সাল থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন গান্ধীজি। এর আগে যদিও বহু দশক ধরে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল। কিন্তু গান্ধীর প্রবেশ ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অসাধারণ প্রাণশক্তি দিয়েছিলো। তাঁর অহিংস নীতি, আশ্চর্য নেতৃত্বের ক্ষমতা বহু মানুষকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে। সকল ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করা, সকল ভাষাকে সম্মান করা, নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা প্রদান এবং দলিত ও অ-দলিতদের মধ্যে ব্যবধান দূর করার ওপর জোর দেন মহাত্মা গান্ধী।
১৮৯১ সালে লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়তে যান তিনি এবং বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে একটি আইন কোম্পানির আইন পরামর্শকের চাকরি নিয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে চলে যান। সেখানে অবস্থানকালে প্রবাসী ভারতীয়দের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
১৯১৪ সালে গান্ধী ভারতে ফিরে আসেন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলে আসেন। এ সময় তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন এবং কয়েকবার কারাবরণ করেন।
মহাত্মা গান্ধী সকল পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূলই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাস থাকতেন মহান এই আধ্যাত্মিক নেতা।
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম গডসে নামের এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হন এই শান্তিকামী নেতা।গডসে মনে করেছিলেন, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের সময় গান্ধীজী মুসলমানদের পক্ষে খুব বেশি সহায়তা করেছিলেন।
পঁচাত্তর বছর আগে এই সেই দিন (৩০ জানুয়ারি)। মহাত্মা গান্ধী দিল্লির বিড়লা হাউসে প্রার্থনা মণ্ডপের দিকে হাঁটছিলেন। আচমকা এগিয়ে আসেন বছর ৩৫-এর নাথুরাম গডসে। একেবারে সামনে এসে পকেট থেকে বের করেন পিস্তল। পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তিনটি গুলি ছোড়েন গান্ধীর দিকে। মহাত্মা গান্ধীর বুকে, পেটে এবং কুঁচকিতে আঘাত করেছিল গুলিগুলো।
১৫ মিনিটের মধ্যেই প্রয়াত হন ‘জাতির পিতা’। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সামরিক বিভাগের কর্মীরা গডসেকে আটক করেন। তাঁর পিস্তল ছিনিয়ে নেন। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আগে ঘাতক গডসেকে উপস্থিত উত্তেজিত জনতা মারধর করে। পরে তুঘলক রোড থানায় গডসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীকে সর্বপ্রথম ‘জাতির পিতা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন গান্ধীজির দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। আইনস্টাইন বলেছিলেন, মানুষ বিশ্বাস করবে না যে, এমন ব্যক্তি কখনও এই পৃথিবীতে এসেছেন।
বিষয়: অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মহাত্মা গান্ধী জন্মদিন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।