যে পথে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪৫

যে পথে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব। এর আগে বাজার বিশ্লেষকরাও একই ধরনের ধারণা করেন। চলমান অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো সমাধান না দেখে দেশটির সাধারণ মানুষ রাজাপাকসে সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।

জানা গেছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ক্যাম্প স্থাপন করেছে বিক্ষোভকারীরা। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির অর্থনীতিতে যে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে তা সমাধানের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। তীব্র জ্বালানি ও খাবার সংকটের মধ্যেই ডাক্তাররা সতর্ক করে জানিয়েছেন খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধ। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটনখাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু করোনা মহামারিতে চলা কঠোর বিধিনিষেধে ভেঙে পড়ে সে পর্যটন ব্যবস্থা। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশটির অর্থনীতিতে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দ্বীপ রাষ্ট্রটি মূলত বিদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল।

অন্যদিকে পর্যটন নির্ভর দেশটির অর্থনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। সম্প্রতি সরকারের পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছেন। অনেক সমালোচকরা মনে করেন সরকারের দীর্ঘদিনে অব্যবস্থাপনার কারণে আজকের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানালেও সাড়া দেয়নি বিরোধীরা। তাছাড়া বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চিন্তা ভাবনা করছে।

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চলতি বছরে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন তিনশ থেকে চারশ কোটি ডলার। সাহায্য পেতে দেশটি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা ঠিক করেছে।

সংসদে গোতাবায়ে রাজাপাকসের এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে জানিয়ে নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্থাটির কাছে আমাদের আবেদন হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থ ছাড় দেওয়া। আইএমএফ ছাড়াও অন্যান্য দাতা ও সরকার থেকে কিছু সহায়তা আসবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে বিদেশে বসবাসরত প্রবাসীদের দেশে নগদ অর্থ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। খাদ্য ও জ্বালানির ব্যয় মেটাতে এ অর্থ চাওয়া হয়েছে। কারণ আমদানি করতে যে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন তা এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার হাতে নেই। এর আগে ৫১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার কথা জানায় দেশটি।

শ্রীলঙ্কায় যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য সতর্কবার্তা। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও স্বজনপ্রীতি যেকোনো অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে। কারণ সঠিক ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতারভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করলে যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়।

এনএফ৭১/আরআর/২০২২




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top