রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে যেভাবে ব্যবহার করতে চায় পশ্চিমারা

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৭:১০

রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে যেভাবে ব্যবহার করতে চায় পশ্চিমারা

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া উচিত। অস্ট্রেলিয়ার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য দেব শর্মা সম্প্রতি নিক্কেই এশিয়ার এক নিবন্ধে এমন দাবি করে বলেন, সংস্থাটিতে স্থায়ী সদস্যপদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে মস্কো। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশের তালিকা থেকে রাশিয়াকে বাদ দিতে যুক্তরাজ্য প্রস্তুত। ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে।

ইউক্রেন সংকটের পর নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার স্থায়ী সদস্য পদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। এর মাধ্যমে রাশিয়াকে দমনের জন্য জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনাকে ব্যবহার করার চেষ্টা শুরু হয়। চীনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশ্চিমাদের এ সংক্রান্ত প্রচারণা উত্তেজনা ও ক্ষতিকর ছাড়া কিছুই নয়। এটা ইউক্রেন সংকটকে কাজে লাগিয়ে মস্কোকে নিষ্ক্রিয় অবস্থানে রাখার একটি প্রবণতা।

চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের উপ-পরিচালক ঝাং তেংজুন বলেন, এগুলো সব রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রচারণার অংশ। কারণ পশ্চিমারা মনে করে ভেটো ক্ষমতা থাকায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সন্তোষজনক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না জাতিসংঘ। ফলে সংস্থাটি থেকে মস্কোকে বাদ দিয়ে আরও সংগঠিত পদক্ষেপ নিতে চায় তারা।

চায়না ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ইয়াং শিউয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট নিজেদের স্বার্থেরভিত্তিতে জাতিসংঘের সংস্কার চায়। রাশিয়ার জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে লাভের ফল ঘরে তোলার চেষ্টা করছে তারা।

সবচেয়ে বড় কথা হলো জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। তাই এ ইস্যুকে সামনে এনে সর্বোচ্চ সংস্থাটির নিয়ম-কানুনকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে পশ্চিমারা। কোনো সদস্যকে বাদ দিতে হলে স্থায়ী পাঁচ সদস্যেরই সম্মতির প্রয়োজন হয়, যা পরিষ্কারভাবেই অবাস্তব।

ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক সাংবাদিক ও কলামিস্ট ডেভ লিনডর্ফ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে কেন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দেওয়া হয়নি। ৭ এপ্রিল সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির পর রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার পর এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।

লিনডর্ফ এক পর্যালোচনায় লিখেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোর সদস্যদেশগুলো জানিয়েছে, অন্যদেশে হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করছে রাশিয়া। একই ধরনের অপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কেন মানবাধিকার পরিষদ থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। কেন শুধু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অপরাধী বলা হচ্ছে। একই ধরনের অপরাধ কি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্ট করেনি?

ঝাং বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা স্পষ্টভাবে জাতিসংঘকে একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে তখন পশ্চিমারা একটি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধায় থাকতে চায়।

তিনি বলেন, জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক যেসব মৌলিক নিয়ম রয়েছে সেগুলোর সমাধান সমতারভিত্তিতে হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর সমাধান অবশ্যই নিরপেক্ষতার মাপকাঠিতে হওয়া উচিত, কারা কতটা শক্তিশালী সে হিসেবে নয়।

সূত্র: গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত মতামতের আলোকে

এনএফ৭১/আরআর/২০২২




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top