শ্রীলঙ্কায় জরুরি সেবা ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২, ২১:০৯
জ্বালানির তীব্র ঘাটতি মেটানোর মরিয়া চেষ্টার অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা মঙ্গলবার থেকে আগামী দুই সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখবে এবং স্বাস্থ্য, ট্রেন ও বাসের মতো জরুরি বলে বিবেচিত সেবাগুলোতেই কেবল জ্বালানি সরবরাহে অনুমতি দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক মন্ত্রী।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকা শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং সোয়া ২ কোটি জনসংখ্যার দেশটি খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির ব্যয় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। গার্মেন্টসের মতো যেসব খাত ডলার আয় করে তাদের হাতে কেবল এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মতো জ্বালানি আছে; স্বাভাবিক যে চাহিদা তা পূরণ করতে গেলে দেশটির কাছে থাকা মজুদ এক সপ্তাহেরও কম সময়ে ফুরিয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে সম্ভাব্য একটি বেইল আউট নিয়ে দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলেও দেশটির অনেকেই বেইল আউটের অর্থছাড় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছে না এবং পাসপোর্টের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। লঙ্কান নৌবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সোমবার দেশটির পূর্ব উপকূলের কাছ থেকে ৫৪ ব্যক্তিকে আটক করেছেন, যারা নৌকায় করে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। গত সপ্তাহেও এরকম ৩৫ ‘নৌকাযাত্রী’কে ধরা হয়েছিল। গত মাসে সরকারপন্থি ও বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দেশ জুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু ও তিন শতাধিক আহত হলে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর রনিল বিক্রমাসিংহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। জ্বালানি ঘাটতি প্রকটতর হলে দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কাও রয়েছে। বিরোধীদলের নেতা সাজিথ প্রেমদাসা এরই মধ্যে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, জ্বালানি ঘাটতির কারণে দেশ পুরোপুরি ধসে পড়েছে। এই সরকার বারবার জনগণকে মিথ্যা বলছে এবং তাদের সামনে আগানোর কোনো পরিকল্পনাই নেই।
শ্রীলঙ্কার সরকারের মজুদে ৯ হাজার টনের মতো ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রোল আছে বলে রবিবার জানিয়েছিলেন দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী। নতুন চালান কবে আসবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ভারতীয় অয়েল কর্পোরেশনের (আইওসি) শাখা লঙ্কা আইওসি বলেছে, তাদের কাছে এখন ২২ হাজার টন ডিজেল ও সাড়ে ৭ হাজার টন পেট্রোল আছে। ১৩ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে পেট্রোলাও ডিজেল মিলিয়ে ৩০ হাজার টনের আরেকটি চালান পাওয়ারও প্রত্যাশা করছে তারা। কেবল পরিবহন সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই দেশটির প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন ডিজেল ও ৩ হাজার টন পেট্রোল লাগে বলে জানিয়েছেন লঙ্কা আইওসির প্রধান মনোজ গুপ্ত। এরপর জ্বালানির বড় ভোক্তা হলো পোশাক ও টেক্সটাইলের মতো খাতগুলো; মে-তে শ্রীলঙ্কার পোশাক ও টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর রপ্তানি ৩০ শতাংশ বেড়ে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারে পৌঁছেছিল বলে সোমবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
বিষয়: শ্রীলঙ্কা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।