আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন ঋষি সুনাক

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৫:১৮

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়েছেন ঋষি সুনাক। মঙ্গলবার বাকিংহ্যাম প্যালেসের ১৮৪৪ রুমে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করেন ঋষি। এরপর তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান রাজা। রাজার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

৪২ বছর বয়সী ঋষি যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী। গত দুই শতকের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রীও তিনি। তাছাড়া প্রথম সাদা চামড়া বিহীন ও প্রথম এশিয়ান-ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যমতে, প্রথম অশ্বেতাঙ্গ, প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা হিসেবে যুক্তরাজ্য শাসন করবেন ঋষি। এছাড়া, বিগত ২০০ বছরের মধ্যে দেশটির কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন ঋষি।

১৮১২ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হলেন ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক। আধুনিক যুগে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দ্রুততম সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে পৌঁছানোর রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। এজন্য মাত্র সাত বছর সময় নিয়েছেন ঋষি।

এছাড়া, রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পাওয়া প্রথম ব্যক্তিও তিনি। অর্থাৎ, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ পরবর্তী যুগে শপথ নেওয়া প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হলেন ঋষি সুনাক। চলতি বছরে এ নিয়ে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী পেলো যুক্তরাজ্য।

এরআগে নিয়ম অনুযায়ী রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন লিজ ট্রাস। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন কিং চার্লস। এরপরই বাকিংহ্যাম প্যালেসে আসেন ঋষি সুনাক।

ট্রাসের পদত্যাগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাকিংহ্যাম প্যালেস। একটি বিবৃতিতে প্যালেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: মাননীয় এমপি এলিজাবেথ ট্রাস সকালে রাজার সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী ও কোষাগারের ফার্স্ট লর্ডের দায়িত্ব ছাড়তে পদত্যাগ পত্র জমা দেন, যেটি মহামান্য আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন।

এদিকে, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, প্রথমেই ১৫ জন নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। এ অবস্থায় চোখ পড়েছে চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার পদে। এটি হলো রাজস্ব, সরকারি আর্থিক বিষয়, ট্যাক্স পলিসি এবং ব্যয়ের খাত দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত পদ। এরপরেই আসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের বিষয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃটেনের পররাষ্ট্রনীতি এবং অন্য দেশের সঙ্গে বৃটেনের সম্পর্ক নির্ধারণ করেন।

গুরুত্বপূর্ণ অন্য পদের মধ্যে আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় অভিবাসন ও পুলিশের বিষয় আশয় দেখাশোনা করে। তবে বর্তমান চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট নিরাপদ থাকবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য পদগুলোতে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তার মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ডমিনিক রাব, পেনি মরডান্ট, মাইকেল গভ এবং অলিভার ডোডেন।

৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। তার বাবা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ।

ঋষির দাদা-দাদি অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৬০ এর দশকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। যশবীর সুনাক যুক্তরাজ্যে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে ও ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঋষি সুনাকই সবার বড়।

যুক্তরাজ্যের রমসি, হ্যাম্পশায়ারের স্ট্রউড স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। পরে উইনচেস্টার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ঋষি। ২০০১ সালে তিনি প্রথম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেন।

ঋষি সুনাক ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণ মূর্তির জামাতা। নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার সঙ্গে তার পরিচয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই প্রণয় ও পরে বিয়ে।

২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ঋষি।

তবে বাজেট বিতর্কের জেরে গত ৫ জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি। তার পদত্যাগে বরিস জনসন সরকারের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। যার জেরে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

এরপর বরিসের উত্তরসূরী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান ঋষি। তবে শেষপর্যন্ত লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু এবার আর ঋষির পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন ও পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন এশীয় বংশোদ্ভূত এ নেতা।

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top