তুরস্ক ও সিরিয়াজুড়ে হাহাকার-আর্তনাদ
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়াল
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০১:৩৯
শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। এরইমধ্যে দেশ দুটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার ৩৮৩তে দাঁড়িয়েছে। খবর: আল জাজিরা, সিএনএন।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরী ব্যবস্থাপনা সংস্থার মতে, মৃতের সংখ্যা কয়েক ঘন্টার মধ্যে ৩ হাজারের বেশি বেড়েছে এবং এখন ১২ হাজার ৩৯১-এ দাঁড়িয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৯৯২ জন। যার মধ্যে ১ হাজার ৭৩০ জন উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়, সেইসাথে সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত অংশে ১ হাজার ২৬২ জন মারা গেছে।
ত্রাণ সংস্থা এবং উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে। ফলে এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দারা ধীরগতির অভিযোগ তুলে উদ্ধারকাজের সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে এবং এ কারণেই ভূমিকম্পে এত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রচণ্ড শীতসহ নানা কারণে ধসে পড়া স্থাপনায় আটকা পড়ার ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে। নাগরিকদের অনেকেই বলছে, উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের ‘ধীরগতিতে’ তারা ক্ষুব্ধ। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের পর ধার্য করা ‘ভূমিকম্প করের’ অর্থ কোথায় কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির বিরোধী দলের নেতা কেমাল কিলিকদারুগলো ব্যাপক প্রাণহানির জন্য প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে দায়ী করেছেন।
এদিকে, ভূমিকম্পে তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কাহরামানমারাস এবং হাতাইসহ কয়েকটি শহর পরিদর্শন করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। এ সময় তিনি এই ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং নতুন বাড়ি তৈরি করার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সবই আমরা কাজে লাগিয়েছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। রাষ্ট্র তার কাজ করে যাচ্ছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এরদোয়ান স্বীকার করেছেন, ভূমিকম্পের সময় প্রাথমিক উদ্ধার অভিযানে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জোর দিয়েছেন তিনি। একই সময়ে তিনি তুর্কি জনগণকে ধৈর্য্য ধরতে এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটকে পড়া ব্যক্তিদের আত্মীয়রা ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষা করছেন। তাদের আশা, স্বজনদের হয়তো জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু, তীব্র শীতের কারণে উদ্ধারকাজ ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গৃহহীনদের দুর্দশা বেড়েছে। এ ছাড়া, কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নেই।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভূমিকম্পে উভয় দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া সংস্থাটির পূর্বাভাসে সতর্ক করে বলা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। ভূমিকম্পে উদ্ধার কাজে সহযোগিতার জন্য তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
জাতিসংঘ, ইইউ, ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান, ইরাক, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের সরকার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সাহায্য পাঠানো হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত সোমবার (৬ ফেব্রয়ারি) ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে দেশ দুটিতে ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার।
এরআগে, ১৯৯৯ সালে ৭.৪ মাত্রার এক ভূমিকম্পে তুরস্কে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হরান; আহত হন ৩৩ হাজারের বেশি। এরই মধ্যে এবারের ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
বিষয়: মৃতের সংখ্যা ভূমিকম্প তুরস্ক-সিরিয়া রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান News News Flash newsflash71 Latest News Update News
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।