শুধু সিরিয়াতেই ক্ষিদের জ্বালায় জ্বলছে প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ
তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৪ হাজার ছুঁইছুঁই
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০১:৪০
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৩১ জনে। তুরস্কে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩১৮ জনে। দেশটিতে আহত হয়েছেন ৮০ হাজার ৫২ জন। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেত্তিন কোসা এ তথ্য জানান। এদিকে, সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৫১৩ জন। সিরিয়াজুড়ে আহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ২৪৫ জন। সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দুই হাজার ২৯৫ জন আর বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দুই হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। খবর সিএনএনের।
গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে আঘাত হানে চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের পরে আঘাত হানে আরও শতাধিক আফটারশক। এর মধ্যে কয়েকটি ছিল বেশ শক্তিশালী।
স্মরণকালের ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে লাখো মানুষের জীবন। সময় যত গড়াচ্ছে ততোই বাড়ছে অনিশ্চয়তা। সর্বস্ব হারিয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর তুষারপাত। তীব্র শীত উপেক্ষা করেই চলছে উদ্ধারকাজ। ধ্বংসস্তূপের ভেতর প্রাণের সন্ধানে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ভূমিকম্পে তছনছ তুরস্কের গাজিয়ানতেপসহ আশপাশের এলাকা। ভূমিকম্পে বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ধসে পড়েছে বহু মহাসড়ক। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার কারণে তুরস্কের হাতায় ও সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের দুর্গম এলাকায় পৌছাতে পারছেন না উদ্ধারকর্মীরা। দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করতে না পারায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
যোগাযোগ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্গত এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না ত্রাণ সহায়তাও। বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর দিন পার করছেন এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা। তুরস্কের পাশাপাশি সিরিয়ার আলেপ্পো শহরেও একই অবস্থা। বিভিন্ন মহাসড়ক ধসে পড়ায় চলতে পারছে না কোনো যানবাহন। যুদ্ধকবলিত দেশটিতে ভূমিকম্প যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছায় দেখা দিয়েছে মানবাবিক সংকট।
এদিকে, সোমবার ভোররাতে যে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক ও সিরিয়া, তাকে বিগত এক দশকের সবথেকে শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প বলেই মনে করা হচ্ছে। বিপর্যয়ের ৭২ ঘণ্টা পার হতেই ধীরে ধীরে আশা ছাড়তে শুরু করেছিলেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। তবে এই বিপর্যয়ের মাঝেও মিরাকেল ঘটেছে একাধিকবার। ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে এখনও বেশ কয়েকজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের পাঁচদিন পরও বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপে মিলছে জীবিত মানুষ। যেমন তুরস্কে ভূমিকম্পের ১০৪ ঘণ্টা পর এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর কাহরামানমারাসের কিরিখান এলাকার একটি বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ওই নারীকে বের করে আনে উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধারের পরপরই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওই নারীর নাম জয়নেপ কাহরামান। বয়স ৪০ বছর। বিশাল ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাকে উদ্ধার করে জার্মানি থেকে আসা একদল উদ্ধারকর্মী। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একটি স্ট্রেচারে করে তাকে বের করে নিয়ে আসা হয়। এরআগে, তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ৯৬ ঘণ্টা পর দেড় বছর বয়সী এক শিশুকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার পরিবারের সদস্যদেরও জীবিত উদ্ধার করা হয়।
তুরস্কের ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ থেকে এক কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্ধারকারী দল। গতকাল শুক্রবার রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে পাঠানো এক বার্তায় তারা জানায়, ১৭ বছর বয়সী জীবিত এক কিশোরী ছাড়াও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল।
ধ্বংসযজ্ঞ থেকে জীবিত মানুষের সন্ধানে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের উদ্ধারকর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে ৪৬ সদস্যের এই দল বর্তমানে ক্যাম্প করে উদ্ধার কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন আদিয়ামান শহরে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাশেদ ইকবাল জানান, কাজ করতে এসেই সকাল বেলা স্থানীয়দের সহযোগিতায় একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ এখনও চলমান রয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ প্রদেশে মাঠে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজারের বেশি উদ্ধারকর্মী। এদের মধ্যে বিদেশি টিমও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তুরস্কে এত সংখ্যক বাড়িঘর ভেঙে পড়ার কারণ শুধু ভূমিকম্প নয়, বরং অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের জন্যই তা ভেঙে পড়েছে। এমনকী, ভূমিকম্প প্রবল এলাকাগুলিতেও ব্যাঙের ছাতার মতো রিয়েল এস্টেট ব্যবসা গজিয়ে উঠেছিল। এই বিপর্যয়ের জন্য সরকারকেই দায়ী করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তুরস্ককে নতুন করে গড়ে তুলতে আনুমানিক ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার খরচ হবে বলে জানিয়েছে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকা।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।