আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের দামামা, নতুন করে এ সংঘাত কেন?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৪৩

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী কী কখনও যুদ্ধ ও সংঘাতহীন ছিল? সম্ভবত নয়। আসলে একটি যুদ্ধ শেষ না হতেই আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়। গেলো বছরগুলোতে কোনো না কোনো সময় কোনো না কোনো প্রান্তে যুদ্ধ লেগেছে এবং সেই যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রান্তে যুদ্ধ চলছে। আর সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশ ও অঞ্চলের নাম। আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ যেন সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। সেই রেশ ধরে সামরিক আক্রমণ চালিয়ে বিচ্ছিন্ন নাগোরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আজারবাইজান। তারপর থেকেই অঞ্চলটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ান।

আজারবাইজান বলছে, তাদের অধীনে কারাবাখের বাসিন্দারা নিরাপদ থাকবে, কিন্তু আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেখানে জাতিগত নির্মূল শুরু হয়ে গেছে।

গত মঙ্গলবার নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের সেনা অভিযানের ২৪ ঘণ্টার মাথায় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণ করে আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র জমা দেওয়া শুরু করে তারা।

কিন্তু দুটি দেশের মধ্যে এই সংঘাতের কারণ কী? আজেরীয়রা বলছে, দীর্ঘদিনের সংঘাতের পেছনে তাদের বহু দিনের জমে থাকা ক্ষত আর নিরীহ মানুষের যন্ত্রণা রয়েছে।

নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের একটি ভূখণ্ড। তবে এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। আজারবাইজানের অভিযোগ, নাগোরনো-কারাবাখসহ আশপাশের বিশাল আজারবাইজানি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া।

তবে এই সাংস্কৃতিক বিভেদ কেবল রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই, এর পাশাপাশি ধর্মীয় বিভেদও দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। আর্মেনিয়া খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, অন্যদিকে আজারবাইজান মূলত মুসলিম।

আর্মেনীয়দের জন্য এই এলাকা তাদের প্রাচীন খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির শেষ ধারক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর আজেরীদের জন্য কারাবাখ মুসলিম সংস্কৃতির একটা প্রাণকেন্দ্র, তাদের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম কবি ও সঙ্গীতজ্ঞদের পবিত্র জন্মস্থান।

দুটি দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে বড় আকারে যুদ্ধ হয়েছে। এতে ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এরপর ২০২০ সালের যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এরপর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হয়। কিন্তু সংঘাত আজও চলছে। সাম্রাজ্যবাদের অস্ত্র বাণিজ্যতো রয়েছেই।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top