১৯৪৮ সালের পর কেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়লো ইসরায়েল?
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৪
ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজা উপত্যকাভিত্তিক সংগঠন হামাস গেলো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে। এতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সীমান্তবর্তী গাজা উপত্যকা আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে এসব রকেট হামলা শুরু করে হামাস। হামলার প্রথম ২০ মিনিটেই ৫ হাজার রকেট ছোড়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। সেই সঙ্গে ইসরাইলের ভেতরে ঢুকেও হামলা চালানো হয়েছে বলে তেলআবিব থেকে জানানো হয়েছে। এর জবাবে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ৫০০ জন।
বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালের পর (গত ৭৫ বছরে) কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি দখলদার ইসরাইল। গণমাধ্যমটির আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর সম্পাদক জেরেমি বাওয়েন বলেছেন, ১৫ বছর আগে হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু এই ১৫ বছরে তারা কখনো এ ধরনের কোনো কিছু করেনি। ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে মাঝে মাঝে সংঘর্ষ হয় হয়। কিন্তু সেগুলো মূলত পশ্চিম তীরে হয়ে থাকে। এই পশ্চিম তীর জেরুজালেম থেকে শুরু করে জর্ডান সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।
শনিবার সকালে যেভাবে হামাসের শত শত যোদ্ধা ইসরাইলে প্রবেশ করেছেন তা ইসরাইলিরা কখনো কল্পনাও করেনি। এছাড়া চেকপোস্টে থাকা ইসরাইলি সেনাদের যেভাবে হামাসের সদস্যরা ধরে নিয়ে এসেছেন সেটি অনেকের কাছে বিষ্ময় মনে হয়েছে। তবে হঠাৎ কেন এমন কঠোর সামরিক অবস্থান নিল হামাস? আলজাজিরার তথ্যমতে, ইসরাইলি দখলদারিত্বের ইতি টানতেই হামাস এ সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম পরিচালনার মাধ্যমে দশকের পর দশক ধরে চলা ইসলাইলি দখলদারিত্ব, শোষণ ও বঞ্চনার জবাব দেওয়া হচ্ছে বলে আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন হামাস মুখপাত্র খালেদ কারামি।
তিনি বলেন, আমরা চাই বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং পুরো বিশ্বের মানুষ আমাদের ওপর পরিচালিত অত্যাচারের কথা জানুক। আমরা চাই আমাদের মানুষ এবং আমাদের ভূখণ্ডের ওপর, আমাদের পবিত্র প্রার্থনা কেন্দ্র আল-আকসার দখলদারিত্ব থেকে ইসরাইলিরা সরে যাক। অনেক বছরের পুঞ্জিভূত অত্যাচার ও দখলদারিত্বের জবাব দিতেই আমরা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছি। ইসরাইলি দখলদারিত্ব এবং শোষণের অবসানে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে হামাসের সামরিক কমান্ডার মুহাম্মদ দেইফ বলেন, আমরা অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম শুরু করে দিয়েছি। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান হবে। দেশপ্রেমিক সব ফিলিস্তিনিকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এই হামলাকে মহান বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করে দেইফ বলেছেন, এই হামলার মধ্য দিয়ে মহান বিপ্লবের সূচনা করা হলো।
ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর দাবি, দখলদার ইসরাইলি বাহিনীকে বিতাড়িত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এবং এ উদ্দেশ্য থেকেই অকস্মাৎ আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে তারা।
হামাসের এমন হামলার পর ইসরায়েলের গোয়েন্দা সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গাজার এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর এতটা সংঘটিত হওয়া এবং হামলার পরিকল্পনার ব্যাপারে আগে থেকে কোনো তথ্যই জানতে পারেনি ইসরায়েল। অথচ গোয়েন্দা তথ্যের দিক দিয়ে ইসরায়েলকে বিশ্বের সেরা হিসেবে ধরা হয়। হামাসের হামলা সম্পর্কে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনা কীভাবে ঘটলো, তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই।
যেভাবে যাচ্ছে সবকিছু তাতে করে আগামী একশ বছরেও এই রক্তের নেশা থামবে বলে মনে হয় না। একদিকে ইসরাইল যেমন পশ্চিম তীর অঞ্চলে কলোনাইজেশনের দোষে দুষ্ট, তেমনি অপরদিকে গাজা অঞ্চলে হামাস তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দোষে দুষ্ট।
হামাস যতদিন গাজা দখল করে রাখবে আর ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দেবে আর ইসরাইলের প্রতি অনমনীয় থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই সংঘর্ষ থেকে মুক্তির কোন আশাই নেই। এখন পর্যন্ত যা দেখা যায় তাতে তো মনে করা হয় হয় গাজা পুরোপুরি বিলীন হবে নয়তো ইসরাইল। তার আগ পর্যন্ত মুক্তি নেই এই ধ্বংসলীলা থেকে। আর জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ও ইসরাইল বাটোয়ারা?
হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার ঘটনায় জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, অব্যাহত হামলা ও আহত-নিহতের ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি উত্তেজনা এড়াতে সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি বেসামরিক জনগণের জন্য গভীরভাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
বিষয়: ভয়াবহ হামলা ইসরায়েল যুদ্ধ ঘোষণা হামাস গাঁজা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।