রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

আইসল্যান্ডে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে আগ্নেয়গিরির লাভা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:৩১

ছবি: সংগৃহীত

আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি লাভাস্রোত লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে হাজার হাজার বাসিন্দা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। গতকাল রবিবার সকালে রেকেনেস অঞ্চলে দ্বিতীয়বার জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি। কয়েকদিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে এই অঞ্চলে। তারই জেরে জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি। মাসখানেক আগে একবার অগ্নুৎপাত হয়েছিল ওই আগ্নেয়গিরিটি থেকে।

দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত রেকেনেস পেননিসুলা। সেখানেই আছে এই আগ্নেয়গিরিটি। রবিবার সকাল থেকে আকাশ লাল করে লাভাস্রোত বের হচ্ছে ওই আগ্নেয়গিরিটি থেকে। লাভার যে দেয়াল এতদিন পর্যন্ত সেখানে ছিল, তা ভেঙে ক্রমশ লাভাস্রোত নিচের দিকে নামতে থাকে। পাহাড়ের নিচেই আছে গ্রিনদাভিক শহর। মৎসজীবীদের ওই এলাকায় ঢুকে পড়ে লাভাস্রোত। তার আগেই অবশ্য একরাতের মধ্যে পুরো শহর খালি করে দেওয়া হয়েছিল। সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।

তিন হাজার আটশ মানুষ ওই এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত নভেম্বরে একের পর এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল ওই এলাকা। তখনো একবার তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে তারা বাড়ি ফিরেছিলেন। এবার আরও একবার তাদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

লাভাস্রোত শহরে ঢুকে যাওয়ার পর আর তারা সেখানে ফিরে যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অগ্নুৎপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকার পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়।

রবিবার সকালে একটি স্থানীয় চ্যানেলের ফুটেজে দেখা গেছে, গল গল করে লাভা শহরের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। একটি বাড়িতে আগুন লেগে গেছে। দাউদাউ করে সেটি জ্বলছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বোঝা সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে সরকার। অগ্নুৎপাতের জন্য এখনো কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি। আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রবিবার সকাল ৭টা ৫৭ মিনিটে প্রথম অগ্নুৎপাত শুরু হয় আগ্নেয়গিরিটি থেকে। যেখানে এই ঘটনা ঘটছে সেখান থেকে আইসল্যান্ডের রাজধানী মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই গোটা অঞ্চলে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।


সারা পৃথিবীতে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সংখ্যা দেড় হাজার। এসব আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে আছে ৮১টি দেশে।বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেঁটে বলছেন, ১৫০০ সালের পর থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে; যার মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে মাত্র ছয়টি অগ্নুৎপাতের ঘটনায়।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট, সরকারি তথ্য ও ঐতিহাসিক দলিল ঘেঁটে এসব পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে মারা গেছে প্রায় ২,০০০ মানুষ।

এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই হয়েছে ফিলিপিনে, ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। সারাবিশ্বে যতগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে, সেসবের ১০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাস প্রায় ৮০ কোটি মানুষের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এই ১০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাংবাদিক এবং আগ্নেয়গিরিবিদ রবিন অ্যান্ড্রুজ বলেছেন যে চলমান অগ্ন্যুৎপাতে শহরে লাভার প্রবেশ অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি ঘটনা। বিবিসিকে তিনি বলেন, দুটি ফাটল থেকে লাভা বর্ষণের গতি মন্থর হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষতির সময়কাল এবং তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে লাভার বিশদ বর্ণনা সম্ভব নয়।

যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য এই লাভা উদ্‌গিরণকে বড় সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন রবিন অ্যানড্রুজ। কারণ, অগ্ন্যুৎপাতের সময় সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গত হয়, যা ত্বক, চোখ, নাক এবং গলার জন্য ক্ষতিকর।

সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক স্তর ও জরুরি ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে আইসল্যান্ডে। মানুষ, সম্প্রদায়, সম্পত্তি বা পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই সতর্কতা জারি করা হয়।

২০২১ সাল থেকে রেইকজেনেসে এটি পঞ্চম অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা। পৃথিবীর বৃহত্তম দুটি টেকটোনিক প্লেট ইউরেশিয়ান ও নর্থ আমেরিকার মাঝখানে মিড-আটলান্টিক রিজে অবস্থিত দেশ আইসল্যান্ড। এখানেই ৩৩টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অবস্থান।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top