রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

বেশি আসনে জিতেও মসনদ অধরা ইমরানের দলের

সরকার গঠনের আগেই জামিন পেলেন ইমরান খান

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৫:৫৬

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে ১৪টি মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে। পিটিআইয়ের আরেক নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশিও ১৩টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। 

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাসবিরোধী আদালত (এটিসি) ৯ মে দাঙ্গাসংশ্লিষ্ট ১২টি মামলায় ইমরান খানের জামিন মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর এবং সেনা জাদুঘরে হামলা নিয়ে আরও দুই মামলায় তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে ইমরান সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি ১৩টি মামলায় জামিন পেয়েছেন।

ইমরান ও মাহমুদ কুরেশির জামিন আবেদনের শুনানি করেন এটিসির বিচারক মালিক এজাজ আসিফ। আদালত বলেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তার করে রাখার কোনো এখতিয়ার নেই। ৯ মে দাঙ্গাসংশ্লিষ্ট মামলায় সব আসামি জামিনে রয়েছেন।

গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজিরা গেলে গ্রেপ্তার হন ইমারান খান। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভ থেকে হামলা হয় সেনা স্থাপনায়। এসব দাঙ্গার ঘটনায় ইমরান খানের নামে বেশ কয়েকটি মামলা দেওয়া হয়।

অবশ্য ২০২২ সালে সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক আইনি জটিলতায় পড়ছেন ইমরান খান। তার নামে প্রায় ২০০ মামলা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি চার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইমরানকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

১০ বছরের জন্য তাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে পিটিআই ও ইমরান-সমর্থকদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এসব সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কারাগারে বন্দি তিনি।

নির্বাচনে না দাঁড়ালেও জনগণের মাঝে ইমরান খান ও তার দল পিটিআয়ের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই জনপ্রিয়তা যে শুধু সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়, তা ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে পাকিস্তানিরা প্রমাণ করে দেখালেন। ফলে এবারের ভোটে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশ ভালো করেছেন।

তবে ফল ঘোষণা যত শেষের দিকে নির্বাচন ঘিরে সমীকরণ তত জটিল থেকে জটিল হচ্ছে। পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সরকার গঠন করতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচন হয়েছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। অ্যাসেম্বলির মোট আসনসংখ্যা ২৬৬টি। এসব আসনের মধ্যে একটি ব্যতীত বাকি সবগুলোতে নির্বাচনী ভোটগ্রহণ হয়েছে বৃহস্পতিবার।

গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৫২টি আসনের ফলাফল জানা গেছে। সেখানে দেখা গেছে, ৯৯টি আসনে জয়ী হয়েছেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) স্বতান্ত্র প্রার্থীরা, ৭১টি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন।

গতকাল শুক্রবার রাতে লাহোরে নিজ বাসবভবনের সামনে জড়ো হওয়া কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে পিএমএলএনকে বিজয়ী বলে দাবি করেন নওয়াজ শরিফ। তিনি আরও জানান, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে জোট সরকার করতে চায় পিএমএলএন।

পিএমএলএনের জ্যেষ্ঠ নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসাক দার জানিয়েছেন, অনেক ‘পিটিআই-স্বতন্ত্র’ বিজয়ী প্রার্থী ইতোমধ্যে পিএমএলএনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে ফলাফল প্রকাশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হয়।

তবে পিটিআই-স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়টি ভিন্ন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এবং উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে নিজেদের দলীয় প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহার করতে পারেননি পিটিআই প্রার্থীরা। বাধ্য হয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ প্রতীক ব্যবহার করতে হয়েছে তাদের।

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top