রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

অবশেষে পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৪:১৯

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে তিন দিন ধরে চলছে সাধারণ পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা। অবশেষে আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির সব কটি আসনের (২৬৪) ফল ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণ শেষ হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। এরও প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা শুরু করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।

এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁদের প্রায় সবাই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাগারে থাকা ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়েছেন।

পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) ওয়েবসাইটে দেখা গেছে ২৬৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছে ১০১টি আসনে যাদের বেশিরভাগই ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত। পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৭৫টি এবং ৫৪টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়া মুত্তাহিদা ক্বওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউম) জিতেছে ১৭টি আসন।

অন্যান্য দলের মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) ৩টি, জামিয়াত উলামা-ই-ইসলাম পাকিস্তান (জেইউআই-পি) ৪টি, ইশতেহ্‌কাম-ই-পাকিস্তান (আইপিপি) ও বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) ২টি করে, মজলিশ ওয়াহ্‌দাত-ই-মুসলিমীন পাকিস্তান (এমডব্লিওএমপি), পাকিস্তান মুসলিম লীগ- জিয়া (পিএমএল-জেড), পাশতুনখাওায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাকিস্তান (পিএনএপিপি), বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি), ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) ও পাশতুনখাওয়া মিলি আওয়ামী পার্টি (পিএমএপি) একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে।

এদিকে, ৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই আসন সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলছেন, তার দলই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল। এই কারণে তিনি অন্যদেরও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কারাবন্দি ইমরান খান ১৬তম সাধারণ নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীরা এগিয়ে থাকায় তিনি তার ভেরিফায়েড এক্স (বর্তমানে টুইটার) অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ সময় শনিবার মধ্যরাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা এক ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন।

এক্সে পোস্ট করা সেই ভিডিওতে তিনি দাবি করেন যে তার দল পিটিআইয়ে ওপর শত দমন-পীড়ন চলা সত্ত্বেও তারা এই নির্বাচনে ‘নিরঙ্কুশ বিজয়’ অর্জন করেছেন।

তার দল সমর্থিত প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সেখানে নওয়াজ শরিফকে একজন ‘দুর্বল নেতা’ হিসেবে অভিহিত করেন। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন যে পাকিস্তানি নাগরিকরা তাকে চায় না।

পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও তারা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৪টি আসন পাচ্ছেন না। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে জয়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী যেকোনো দলকে সমর্থন জানাতে পারেন। দেশটির রাজনীতিতে এ চর্চা বেশ পরিচিত। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন আদায়ে দলগুলোর মধ্যে চলে প্রতিযোগিতাও।

অনেক বিশ্লেষকের অভিমত, পিটিআই-সমর্থিত এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি কোনোভাবে সরকারে থাকেন, তাহলে ইমরানের কারাদণ্ডের সাজা বা তার সরকারি দায়িত্বে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, সেটিকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন তারা।

এদিকে গ্যালাপ পাকিস্তান নামক পোলিং গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তা বিলাল ঘানি এএফপিকে বলেন, পিটিআই যদি সরকার গঠন করতে না-ও পারে, তবু এ ফলাফল বলছে যে 'রাজনৈতিক কারসাজিরও একটা সীমা আছে'। এ ফলই প্রমাণ যে, সেনাবাহিনী সবসময় যা চায় তা পায় না—এটা একটা ভালো দিক।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top