জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস, যা বলল ইসরায়েল
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪, ১৫:১৪
গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। ১৫ সদস্যের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪টি। এই প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে শুধু বিরত ছিল রাশিয়া। হামাসকে এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি জানিয়েছে, ‘গাজা নিয়ে কোনো অর্থহীন আলোচনা করা হবে না।’ এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের দ্রুত বাস্তবায়ন চায়। গত ৩১ মে গাজায় তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের এই প্রস্তাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল সোমবার প্রস্তাবটির ওপর নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয়।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের প্রতিনিধি জানান, তাঁর দেশ গাজা নিয়ে এমন কোনো অর্থহীন ও দীর্ঘমেয়াদি আলোচনায় জড়াবে না, যেটা হামাস নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি কীভাবে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করার সদিচ্ছার কথা জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। সিএনএন বলছে, প্রস্তাব পাসের পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, এটা বাস্তবায়নের ভার এখন ইসরায়েলের হাতে।
রিয়াদ মনসুর আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চাই। প্রস্তাবটি ঠিক পথেই রয়েছে। সব ফিলিস্তিনি এটাকে স্বাগত জানাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। তবেই এই প্রস্তাব স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেবে।’
মার্কিন এ প্রস্তাবে একটি ‘পূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি, নিহত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত এবং ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা খসড়া প্রস্তাবে তিনটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম ধাপে জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর। দ্বিতীয় ধাপে ‘শত্রুতার স্থায়ীভাবে অবসান’ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে যুদ্ধের কারণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়া গাজার জন্য বহু বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনার রয়েছে।
প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা পরিষদের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, ‘আজ আমরা শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছি।’ ব্রিটেনের দূত বারবারা উডওয়ার্ড গাজার পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘দুর্ভোগ দীর্ঘদিন ধরে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থায়ী শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।’ গত মার্চে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে।
এমন সময় গাজায় যুদ্ধবিরতির এ প্রস্তাব পাস হলো, যখন ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় সেখানে ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ উপত্যকার অর্ধেক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ইসরাইল ও হামাসকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড। যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে নতুন সুযোগ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
এর আগে গত ২৫ মার্চ গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ওই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪ সদস্য ভোট দিয়েছিল। তখন ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওই প্রস্তাব মানেনি ইসরাইল।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালালে এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।