বিশ্বজুড়ে ‘উত্তাপ’ ছড়িয়ে ২০২৪ বিদায়

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৬:০৭

ছবি: সংগৃহীত

সংঘাত, ক্ষমতার পালাবদল, নির্বাচনের ডামাডোল, রেকর্ড তাপমাত্রা সব মিলিয়ে ২০২৪ সালকে 'উত্তাপ' ছড়ানোর বছর বলে অভিহিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ।তারা বলছে, টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে পুরো বছরটি।

পতন, পলায়ন

বিশ্বের নানা অঞ্চলে যুদ্ধ, হামলা-পাল্টা হামলা, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন উত্তেজনা তৈরি করেছে। লড়াইয়ের কারণে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ। বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা শাসকদের পতনের ঘটনাও সীমানা ছাড়িয়ে আলোচনার ঝড় তৈরি করেছে বিশ্বজুড়ে।

সংঘাতের কারণে যেমন রক্তবন্যা বয়ে গেছে, আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগেও হারিয়েছে অগণিত প্রাণ। রেকর্ড প্রখর উত্তাপ, ঝড়-ঝঞ্ঝা ও বন্যায় অগণিত মানুষের দুর্ভোগ বছরজুড়েই খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বছরের বড় নাটকীয় পরিবর্তন বলা যায় বাংলাদেশ ও সিরিয়ার সরকার পতন এবং ক্ষমতাবানদের দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনা।

বাংলাদেশে জুলাই মাসের আন্দোলন, ইন্টারনেট বন্ধ, সহিংসতার ঘটনা বিশ্বজুড়েই খবরের শিরোনাম হয়েছে। খুব কম সময়ে অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির সম্মুখিন হয় বাংলাদেশ। দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার পালানো এবং পাঁচই অগাস্টের পরিস্থিতি এসব কিছুই হয়ে দাঁড়ায় বৈশ্বিক খবর। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়টিও ছিল আলোচনায়।

বছরের প্রায় শেষদিকে এসে ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা বাশার আল আসাদের দুর্গেরও পতন হয়। দেশ গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হলেও মূলত রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনের জোরে টিকে ছিলেন আসাদ। গত বছর আরব লীগে তার প্রত্যাবর্তনকে অনেকটা জয় হিসেবেই দেখা হয়েছিল। যদিও এ দফায় বিদ্রোহীদের দমাতে না পেরে রাশিয়া পালিয়ে যেতে হয়েছে এই নেতাকে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে সিরিয়ায়।

যুদ্ধ, হামলা, সংঘাত

আগে থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তো চলছিলই, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধও চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় ২০২৪ সালে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সেখানে নিহতদের মধ্যে ১৩৩ সাংবাদিকও রয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফ্রন্টে ছড়িয়ে পড়ে এই সংঘাত।

এ ছাড়া হামলা-পাল্টা হামলার দিক দিয়ে ইসরায়েলের বাইরে এ বছর ইরানই ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতের অনেক দিকেই ছায়ার মতো ছিল ইরান। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দেশটির বহু দিনের ছায়াযুদ্ধ তীব্র আকার নেয় বছরজুড়ে।

বছরটা শুরু হয়েছিল ১৩ জানুয়ারি ইরানে কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার বার্ষিকীতে জোড়া বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। অন্তত ৮৪ জন নিহত হন সেই বিস্ফোরণে।

ওদিকে গাজায় ইসরায়েলের রাফাহ শহরে অভিযান, আল শিফা হাসপাতালে নতুন অভিযান, ত্রাণ সংকট সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় বাড়তেই থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র বন্ধের হুমকিও দেয়া হয়, যদিও সেসব কিছু খুব একটা ধোপে টেকেনি। আর গাজার সূত্র ধরে ক্রমাগত ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে লেবাননের দিক থেকে হামলা অব্যাহত রাখে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী।

গাজায় হামাস তো ছিলই, সঙ্গে লিবাননের হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীও বছরজুড়ে ইসরায়েলের দিকে হামলা অব্যাহত রাখে। শেষ দিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালাতে শুরু করে হুতিরাও।হিজবুল্লাহর সঙ্গে একটা পর্যায়ে যুদ্ধবিরতিতে যায় ইসরায়েল।

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে অনেক ক্ষেত্রে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালানোর ঘটনা ঘটেছে। বছরের শেষদিকে এসে রাখাইন অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশের দখল নেয় বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশটির সেনাবাহিনী পুরো একটি সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলা হচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সহায়তা অব্যাহত ছিল। এরপরও আগের বছরের তুলনায় চলতি বছর রাশিয়া অন্তত ছয় গুণ বেশি ইউক্রেনীয় ভূমি দখলে নেয়ার তথ্য দিচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার বা আইএসডব্লিউ। সেনা সংকট কাটাতে উত্তর কোরিয়া থেকে যোদ্ধা নিয়োগ করেছে রাশিয়া ।

জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে সেই বোমা হামলার জেরে ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা 'মোসাদের সদর দপ্তর' লক্ষ্য করে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ঘাঁটির উদ্দেশে এবং পাকিস্তানে 'জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল আদলের' ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছিল এই হামলা। সূত্র: আমাদের সময়



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top