লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে পুড়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৮
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। চারপাশে বাজছে সাইরেন। ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে আছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আকাশে চক্কর দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের হেলিকপ্টার। পালিয়ে যাচ্ছে মানুষ। কোথায় যাবেন, জানেন না অনেকেই। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে অঙ্গরাজ্যটি।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়ানো দাবানল তিন দিনেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো বাতাসে তা বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়েছে। ভয়াবহ এই দাবানলে শত শত ঘরবাড়ি ও স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাণ গেছে অন্তত পাঁচজনের। এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, প্রতিবেশী কাউন্টিগুলো থেকেও আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও কর্মীবাহিনী। কিন্তু তাতেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।
দাবানলের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে অভিজাত এলাকা প্যাসিফিক প্যালিসেইডসে। সেখানে ১৫ হাজার ৮৩২ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। আগুন ছড়িয়েছে হলিউড হিলসেও। এই এলাকার একটি বাড়িতে ১৯৭৯ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন হলিউডের তারকা অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল। আগুনে সেটিও পুড়ে গেছে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আগুনে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন বিনোদনজগতের আরও অনেকে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। যেমন টেলিভিশনে নিজের বাড়ি আগুনে পুড়তে দেখেছেন অভিনেত্রী প্যারিস হিলটন। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস।
আগুনে এখন পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে শতকোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৩ লাখ ১১ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দাবানলে এখন পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার।
অ্যাকুওয়েদারের প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেন, সামনের দিনগুলোতে আরও অবকাঠামো আগুনে পুড়ে যেতে পারে। এমনটি হলে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক দিয়ে এই দাবানল ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হতে যাচ্ছে। এই আগুনের ফলে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, লোকজন চাকরি হারাবে, আর ধোঁয়ার প্রভাবে চিকিৎসা খরচ বাড়বে।
এদিকে দাবানলে বিপর্যস্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে লুটপাটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বোর্ড অব সুপারভাইজারসের প্রধান ক্যাথরিন বার্জার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। দুর্বৃত্তরা পরিত্যক্ত ওই বাড়িগুলোয় লুটপাট চালাচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের। লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন নেভাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয় অঙ্গরাজ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ২৫০টি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং ১ হাজার সদস্য দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় গেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির পাশাপাশি হেলিকপ্টারও আগুন নেভানোর কাজে মাঠে নেমেছে। অ্যান্থনি ম্যারন বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করছি। তবে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের সব বিভাগ মিলেও এই আগুন নেভানোর মতো যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী নেই।
ক্যালিফোর্নিয়ার পানি সংকট নিয়ে চটেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সরকার অযোগ্য। এই পানিসংকটের কারণে আগুন নেভানোয় বাধা আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগুন নেভাতে যা যা দরকার সব করবে সরকার।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।