গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলের চার নারী সেনা জিম্মিদশা থেকে আজ শনিবার মুক্তি পেয়ে স্বজনদের কাছে ফিরেছেন। গাজা নগরী থেকে তাঁদের একটি গাড়িতে করে ইসরায়েলে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যে চারজন ইসরায়েলি জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছে তাঁদের পরিচয় জানা গেছে। তাঁদের ছবিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
আজ মুক্তি পাওয়া চার জিম্মির একজন কারিনা আরিয়েভ। বয়স ২০। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় নাহাল ওজ সেনাঘাঁটি থেকে তাঁকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
কারিনা আরিয়েভের বোন আলেক্সান্দ্রা বিবিসিকে বলেন, হামাসের হামলার সময় মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কারিনা। কথা বলার সময়ই তিনি গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। আলেক্সান্দ্রা বলেন,‘আমার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য কারিনা ফোন করেছিল। আমরা গুলির শব্দ শুনেছিলাম। ভয়ে আর আতঙ্কে সে কাঁদছিল দখন। পরে তাঁকে জিম্মি করে নেওয়ার ভিডিও দেখি।’
নামা লেভিকে (২০) একটি গাড়িতে বেঁধে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। তাঁর হাত ছিল পেছনে বাঁধা। হামাসের প্রকাশিত এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। কারিনা লেভির মতো নামাও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য। তাঁর মায়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জিম্মি হওয়ার কিছুদিন আগেই নামা সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেওয়া একটি উদ্যোগের অংশ ছিলেন নামা লেভি। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ‘একজন শান্তিকামী’ বলেও ডাকত। তাঁকে ইসরায়েলের দক্ষিণে অবস্থিত নাহাল ওজ সেনাঘাঁটি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। জিম্মির এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায় নামা লেভি হামাস সদস্যদের উদ্দেশে বলছেন, ‘ফিলিস্তিনে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে।’
নাহাল ওজ সেনাঘাঁটি থেকে কিছু নারী সেনা সদস্যের সঙ্গে ড্যানিয়েলা জিলোবাকেও (২০) জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে জিলোবাকে দেখা গিয়েছিল। গত বছর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে ইসরায়েলের সরকারের উদ্দেশে জিলোবাকে বলতে শোনা যায়, তাঁকে কেন পরিত্যাগ করা হলো। জিলোবার প্রেমিকের বাবা জানিয়েছেন, জিলোবার ইসরায়েলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর ছেলে। জিলোবা ইসরায়েলে ফেরার পরই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চায় প্রেমিক।
আজ মুক্তি পাওয়া অন্য চার জিম্মির মতো লিরি আলবাগকেও নাহাল ওজ সেনাঘাঁটি থেকে ধরে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। তবে তিনি সবার চেয়ে ছোট। জিম্মি হওয়ার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল সবে ১৮।
সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর লিরি আলবাগ কেবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। এই সময়ই তাঁকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। লিরির এক চাচাতো বোন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। তিনি ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টকে বলেন, ‘নাহাল ওজ ঘাঁটিতে পদায়ন হওয়ায় লিরি অনেক খুশি হয়েছিল। সেখানে যোগদানের দেড় দিনের মাথায় হামাসের হাতে জিম্মি হয়েছিলেন লিরি।’
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত রোববার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে গাজায় ইসরায়েলের ১৫ মাসের নৃশংস হামলার আপাতত বন্ধ হয়েছে। এরপর প্রথম দফায় হামাস তিন জিম্মিকে ছেড়ে দেয়। এর বদলে ইসরায়েলের কারাগারগুলো থেকে মুক্তি পান ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী। আজ দ্বিতীয় দফায় চার ইসরায়েলি নারী সেনাকে মুক্তি দিল হামাস। আর ইসরায়েল মুক্তি দিয়েছে ২০০ ফিলিস্তিনিকে। সূত্র: প্রথম আলো
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।