গাজায় ‘জাতিগত নির্মূলের’ ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প?

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৮

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে 'পরিষ্কার' করতে চান। তিনি উপকূলীয় অঞ্চলটি থেকে আরও ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে মিশর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, এ বিষয়ে দিনের শুরুতে তিনি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। পরে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও কথা বলবেন।

ট্রাম্প বলেন, আমি চাই মিশর লোকজনকে (গাজার) নিয়ে যাক। আমরা সম্ভবত এখানে ১৫ লাখ মানুষ নিয়ে কথা বলছি। আসুন আমরা ওই পুরো জায়গাটি পরিষ্কার/সাফ করে ফেলি। আপনি জানেন, এটি (গাজা) শেষ হয়ে গেছে।

ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সফলভাবে গ্রহণ করায় তিনি জর্ডানের প্রশংসা করেন এবং বাদশাহকে বলেন, 'আমি চাই আপনি আরও দায়িত্ব গ্রহণ করুন, কারণ আমি এখন পুরো গাজা স্ট্রিপের দিকে তাকিয়ে আছি এবং এটি একটি জগাখিচুড়ি। এটা সত্যিকারের জগাখিচুড়ি।

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, গাজার বাসিন্দাদের 'সাময়িকভাবে বা দীর্ঘমেয়াদী' স্থানান্তর করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এটি এখন আক্ষরিক অর্থেই একটি ধ্বংসাত্মক স্থান, প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে। সুতরাং, আমি বরং কিছু আরব দেশের সাথে জড়িত হতে চাই এবং একটি ভিন্ন স্থানে আবাসন তৈরি করতে চাই। যেখানে তারা (গাজার বাসিন্দারা) পরিবর্তনের জন্য শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

ট্রাম্পের এই বার্তা কীসের ইঙ্গিত দেয়?

কাতারের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল-আরিয়ান আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা 'যুদ্ধের খুব শুরুতে' ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে যতটা সম্ভব 'জাতিগতভাবে নির্মূল' করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, এই পরিকল্পনাটি একাধিক কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। যার মধ্যে একটি হল, আরব নেতারা সেই সময়ে অতিরিক্ত ফিলিস্তিনি শরণার্থী জনসংখ্যা নিতে অস্বীকার করেছিলেন।

আল-আরিয়ান আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা নিজেরাই ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবে আগ্রহী হবে না। তারা খুব ভালো করেই জানে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার অর্থ কী এবং গত ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অবস্থা কেমন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে 'গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত হবে না' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, উগ্র ডানপন্থী ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গাজার বাসিন্দাদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের ট্রাম্পের ধারণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

স্মোট্রিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আরও ভালো জীবন শুরু করার জন্য তাদের (গাজার বাসিন্দাদের) অন্যান্য জায়গা খুঁজে পেতে সহায়তা করার ধারণাটি দুর্দান্ত। তারা অন্যান্য জায়গায় নতুন এবং ভালো জীবন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। নতুন সমাধানের মাধ্যমে 'আউট অব দ্য বক্স' চিন্তাই কেবল শান্তি ও নিরাপত্তার সমাধান আনতে পারে।

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির সময় ফিলিস্তিনিদের গণ-বাস্তুচ্যুতির স্মৃতিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

মিশর এর আগে গাজা থেকে সিনাই মরুভূমিতে ফিলিস্তিনিদের যে কোনো 'জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির' বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। দেশটির সিসি বলেছিলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত '১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে মিশরের সই হওয়া শান্তি চুক্তিকে বিপন্ন করতে পারে'। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, জর্ডানে এরই মধ্যে প্রায় ২৩ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে।

ইসরায়েলে ২০০০ পাউন্ড বোমা পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১৫ মাসের যুদ্ধে ৪৭ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। যদিও সেখানকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। অবিরাম বোমা হামলা বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করেছে, এই শহর পুনর্গঠনে কয়েক দশক বছর সময় লাগতে পারে।

ইসরায়েলকে ২০০০ পাউন্ড বোমা দেওয়ার বিষয়টি এতোদিন আটকে রেখেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বাইডেনের সেই বাধা উপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ট্রাম্প নিজেই এমনটি জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত আকাশযান এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা সেগুলোকে (বোমা) ছেড়ে দিয়েছি। আমরা সেগুলোকে আজই ছেড়েছি। তারা (ইসরায়েল) সেগুলো পেয়ে যাবে। তারা এগুলোর জন্য টাকা দিয়েছে আর দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয় শক্তিশালী এ বোমাগুলো ইসরায়েলে সরবরাহের অনুমতি কেন দিলেন? জবাবে ট্রাম্প, কারণ তারা সেগুলো কিনেছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েলকে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সহায়তা সরবরাহ করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের (ইউএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলকে ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ২৯৭ বিলিয়ন ডলার (মুদ্রাস্ফীতির জন্য সমন্বয় করা হয়েছে) সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ২১৬ বিলিয়ন ডলারই ছিল সামরিক সহায়তা এবং ৮১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা। প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে কিছু ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সূত্র: ইত্তেফাক




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top