ট্রাম্পের গাজা দখলের ঘোষণায় কড়া প্রতিক্রিয়া সৌদির
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৫:৪১
গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অধিকারের বিষয়ে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না সৌদি আরব। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জোরের সঙ্গে এ কথা বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিন তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনও আয়োজন করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা দখল করে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানা স্থাপনের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে ট্রাম্প এও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ ব্যাপারে কোনও বিরোধিতা করবে না সৌদি আরব। তার ভাষ্য, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ব্যাপারে কোনও দাবি নেই সৌদি আরবের।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্য নাকচ করে দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সৌদি সরকার। বিবৃতির মাধ্যমে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ে ‘সুস্পষ্টভাবে’ সৌদি আরবের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে কোনো পরিস্থিতিতেই ব্যাখ্যার কোনো দরকার নেই। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে না সৌদি আরব।
ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা কেবল ফিলিস্তিনিদের জন্যই নয়, আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্যও বেশ সংবেদনশীল, বলছে রয়টার্স।
গত মাসে হওয়া যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সোয়া এক বছরের যুদ্ধের সময়ও ফিলিস্তিনিরা আরেকটি ‘নাকবা’ বা জোর করে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন। ইসরায়েলের জন্মের সময়ের ‘নাকবা’ লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছিল।
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে সৌদি আরবের অবস্থান ট্রাম্পের পাশাপাশি ইসরায়েলের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মঙ্গলবার সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনিরা অন্য জায়গায় পুনর্বাসিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে।
ফিলিস্তিনিরা চলে গেলে গাজায় কারা বাস করবে এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বের মানুষ। আমি মনে করি গাজা একটি আন্তর্জাতিক, অবিশ্বাস্য জায়গায় পরিণত হবে। আমি মনে করি গাজা উপত্যকার সম্ভাবনা অবিশ্বাস্য। আমি মনে করি সমগ্র বিশ্ব, সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা সেখানে থাকবেন, এবং তারা সেখানে বাস করবেন। ফিলিস্তিনিরাও সেখানে বাস করবেন। অনেক মানুষ সেখানে বাস করবেন।
তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা ‘রিভেরা অব দ্য মিডল ইস্ট’ হয়ে উঠবে। আমাদের কাছে এমন কিছু করার সুযোগ রয়েছে যা অসাধারণ হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে ইসরায়েল সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবে এবং সফল হবে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এবং দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়াতে কয়েক মাসের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত এই তৎপরতা চলেছে। তবে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর আরব দেশগুলোর ক্ষোভের মুখে বিষয়টি স্থগিত করে সৌদি আরব।
বিষয়: গাজা উপত্যকা গাঁজা গাজা অভিযান গাজা দখল গাজা ভূখণ্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদির প্রতিক্রিয়া সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।