খনিজ না দিলে ইউক্রেনে স্টারলিংক ইন্টারনেট বন্ধের হুমকি আমেরিকার
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০:৫২

ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ভাগ দিতে রাজি না হলে দেশটিতে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তিনটি সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের প্রাথমিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর স্টারলিংকের প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ এবং জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের সময় বিষয়টি আবারও উত্থাপিত হয়। সূত্রটি বলেছে, বৈঠকের সময় ইউক্রেনকে জানানো হয়, তারা যদি গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ সংক্রান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে স্টারলিংক পরিষেবা অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ওই সূত্রটি বলেছে, ‘ইউক্রেন সম্পূর্ণরূপে স্টারলিংকের ওপর নির্ভরশীল। তারা এটিকে তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করে। স্টারলিংক হারানো...তাদের জন্য বিশাল ধাক্কা হবে।’
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছ থেকে যুদ্ধকালীন সহায়তার বিনিময়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ইউক্রেনীয় খনিজ সম্পদ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়নি। শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। আর ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেন, শিগগিরই একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
এর আগে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের জন্য মাস্ক হাজার হাজার স্টারলিংক টার্মিনাল ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলেন। ইউক্রেনে তাঁকে তখন নায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। তবে পরে ২০২২ সালের শরৎকালে অন্তত একবার তিনি দেশটিতে তাঁর কোম্পানির পরিষেবা সীমিত করেন। সে সময় তখন তিনি কিয়েভের যুদ্ধ পরিচালনা কৌশল নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত করার প্রচেষ্টার বিষয়ে বিভক্ত এবং কিছু আইনপ্রণেতা মাস্কের হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই ও ফেডারেল সংস্থাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো মেলিন্ডা হারিং বলেছেন, ‘ইউক্রেনের সামরিক কৌশলের মূল স্তম্ভ হিসেবে ড্রোন পরিচালনার জন্য স্টারলিংক অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, ‘স্টারলিংক হারানো হবে এক বিরাট পরিবর্তনকারী ঘটনা।’ তিনি উল্লেখ করেন, ড্রোন ব্যবহার ও আর্টিলারি শেলের ক্ষেত্রে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সঙ্গে ১: ১ অনুপাতে আছে। ইউক্রেনের ড্রোনের ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে, যার মধ্যে সমুদ্র ড্রোন, নজরদারি ড্রোন এবং দূরপাল্লার মনুষ্যবিহীন বিমান উল্লেখযোগ্য।
গত বছরের শরতে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে মিত্রদের বিনিয়োগ উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এটি ছিল জেলেনস্কির ‘বিজয় পরিকল্পনার’ অংশ। যার মাধ্যমে তারা আলোচনায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে এবং মস্কোকে আলোচনার টেবিলে আনতে চেয়েছিল। ট্রাম্প এই ধারণাকে সমর্থন করে বলেছেন, তিনি চান ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল খনিজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ করুক, যার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য আর্থিক সহায়তা দেবে।
তবে জেলেনস্কি গত সপ্তাহে এক বিশদ মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ওয়াশিংটন ও মার্কিন কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের ৫০ শতাংশ মালিকানা চায়। এসব খনিজের মধ্যে গ্রাফাইট, ইউরেনিয়াম, টাইটানিয়াম এবং লিথিয়াম উল্লেখযোগ্য।
এরপর থেকে দুই নেতার মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প গত বুধবার জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত একনায়ক’ বলে অভিহিত করেন। এর আগে, জেলেনস্কি বলেন, ট্রাম্প রাশিয়ার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার ফাঁদে পড়েছেন। তারও আগে, ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনই যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের যুদ্ধ শুরু করা উচিত হয়নি।
বিষয়: ইউক্রেন খনিজ সম্পদ স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট স্টারলিংক ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।