সিরিয়ায় আসাদ অনুগতদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৭০

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৪

ছবি: বিবিসি

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের সঙ্গে দেশটির বর্তমান প্রশাসনের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। ওই এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সরকারি সৈন্যের সংখ্যা ১৩ জন। দেশটির লাতাকিয়া প্রদেশে সংঘর্ষের এই ঘটনায় ওই অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে পালিয়ে যাওয়া আসাদ অনুগত যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে আসাদ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সংঘর্ষে সরকারি বাহিনীর ১৩ জন সেনা নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি বাহিনী ব্যাপক সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে সিরিয়ার বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সরকার-সমর্থিত বাহিনী জাবলেহ ও এর আশপাশের এলাকায় আসাদের প্রায় ৭০ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তাছাড়া ২৫ জনেরও বেশি আসাদ সমর্থককে আটক করা হয়েছে। হোমস ও আলেপ্পো শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।  সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচাই না করা ভিডিওতে হোমসের আবাসিক রাস্তায় প্রচণ্ড গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি একটি সতর্কবার্তা জারি করেছেন।

তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ খুনি এবং অপরাধীদের রক্ষায় পালিয়ে যাওয়ার ও মৃত্যুর জন্য জোর দিচ্ছে। পছন্দটি স্পষ্ট; আপনার অস্ত্র জমা দিন অথবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন।

সরকারি টিভি ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, লাতাকিয়ায় রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত একটি বিমানঘাঁটির কাছে সংঘর্ষটি সবচেয়ে তীব্র হয়। সরকারি বাহিনী হেলিকপ্টারসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে বিদ্রোহীদের দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, আসাদ অনুগত ২৮ জন বন্দুকধারী নিহত হয়েছেন, তবে সরকারি বাহিনী দাবি করেছে, সংখ্যাটি আরও বেশি। পাশাপাশি, বেশ কয়েকজন আসাদ অনুগত যোদ্ধাকে আটক করা হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটিই সবচেয়ে বড় সহিংস সংঘর্ষ। আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছে, আসাদের পতনের পর থেকে তারা নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে হোমস ও লাতাকিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায়। সরকারি বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনি বিদ্রোহীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন—অস্ত্র সমর্পণ করুন, না হলে কঠিন পরিণতির মুখে পড়তে হবে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য এই পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও সরকারবিরোধী ড্রুজ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার বর্তমান প্রশাসনকে দেশজুড়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top