মঙ্গলবার ভোররাতের গাজা উপত্যকার চিত্র বিভীষিকাময়। পবিত্র রমজান মাস। অনেকে তখন ভয়হীন শান্তির গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তবে কেউ কেউ তখন সাহ্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় একের পর এক বোমা হামলা। রাতের অন্ধকারে তখন আহত মানুষের আর্তচিৎকার আর দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আবার যেন ফিরে এল দুঃস্বপ্নের রাত।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আবারও হতাহত সব বয়সী ফিলিস্তিনি। ১৫ মাস ধরে চলছে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা। এতে নিহত ৪৮ হাজারের বেশি। এরপর যুদ্ধবিরতিতে কিছুটা স্বস্তি আসে ফিলিস্তিনিদের মনে। ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ছিল প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু আসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা। আগুনে ঘি ঢালে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন করে গাজায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার।
ঘুমন্ত গাজাবাসীর ওপর এই হামলায় অন্তত ৪০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত শত শত ফিলিস্তিনি। এই হামলাকে ‘কেবল শুরু মাত্র’ বলে আখ্যা দিলেন নেতানিয়াহু। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এটি কেবল শুরু। এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে তীব্রতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেব। আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।
নেতানিয়াহু দাবি করেন, আমরা যুদ্ধবিরতি কয়েক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছিলাম, যদিও বিনিময়ে আমরা জিম্মিদের ফেরত পাইনি। আমরা দোহায় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলাম এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবও গ্রহণ করেছি, কিন্তু হামাস সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, উইটকফ উভয় পক্ষের কাছে একটি হালনাগাদ প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। যেখানে ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য পাঁচজন ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
হামাস শুক্রবার জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান সৈন্যের মুক্তি এবং চার দ্বৈত নাগরিকের মরদেহ ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু পাল্টা জবাব দেন। বলেন, আমি হামাসকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে যদি তারা আমাদের বন্দীদের মুক্তি না দেয়, তাহলে আমরা আবার যুদ্ধ শুরু করব। এবং আমরা তা করেছি।
ইসরায়েলের প্রশাসন বলছে, গাজায় ৫৯ জন ইসরায়েলিকে আটক করে রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনো জীবিত রয়েছেন। বিপরীতে ৯ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
আনাদোলু বলছে ভিন্ন কথা। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তিন দফার এই যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয় গত ১ মার্চ। তবে নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপে আসতে রাজী নন। কারণ এই ধাপেই যুদ্ধ চূড়ান্তভাবে শেষ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছিল। আর হামাস মূলত জোর দিয়েছিল যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশের ওপরেই।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।