প্রকাশ্য বিবাদে জড়ালেন ট্রাম্প ও মাস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব প্রকাশ্য বিবাদে রূপ নিয়েছে। সরকারি ব্যয় কমানোর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাস্ক সম্প্রতি তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এই দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। কর ও ব্যয় সংক্রান্ত বিল নিয়ে মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুজনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছিল।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে সমালোচনা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে মার্কিন এই ধনকুবের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি দাবি করেছেন, তিনি যদি আর্থিক সহায়তা না দিতেন তাহলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতেন ট্রাম্প।

টেসলা কর্তা ইলন ট্রাম্পের ব্যয় সংক্রান্ত বিল ‘বাতিল’ করার ডাক দিতেই ফুঁসে ওঠে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে হেঁকে উঠলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই মন্তব্য শুনেই এ বার পাল্টা একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করে চলেছেন ধনকুবের মাস্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বার ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার সিংহভাগ কৃতিত্বই দাবি করে বসলেন ইলন মাস্ক। শুধু তাই নয়, কুখ্যাত কেস ‘এপস্টাইন ফাইল’-এর সঙ্গে ট্রাম্প যোগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে উস্কে দিলেন পুরোনো বিতর্ক।

বৃহস্পতিবার ইলন মাস্ক দাবি করেছেন, তাঁর সমর্থন ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হেরে যেতেন। টেসলা কর্তার দাবি, ‘সে সময়ে একটি আইন প্রণয়ন বিল নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ট্রাম্প। যে কোনও মুহূর্তে তখন পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারত। এই অবস্থায়, ডেমোক্র্যাটরা নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে পারতেন। তাহলে রিপাবলিকানদের পিছনে ফেলে সেনেটে ৫১-৪৯ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে অসুবিধা হতো না।’ মাস্কের কথা অনুযায়ী শুধুমাত্র তার জন্যই পরিস্থিতি বদলে যায়নি।

এখানেই শেষ নয়, এক্স হ্যান্ডলে একের পর এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিশানা ঠুকে চলেছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মন্দার কারণ হবে।’ এরপরই এক্স হ্যান্ডলে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ইলন একটি পোলের আয়োজন করেন। যার বিষয় ছিল, ‘আমেরিকায় কি এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার সময় এসেছে যা জনতার ৮০% এর প্রতিনিধিত্ব করবে?’ একটি পোস্টে উত্তরে, ট্রাম্পকে সরিয়ে জেডি ভান্সকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর বিষয়টিও সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরোনো বিতর্কও উস্কে দিয়েছেন ইলন মাস্ক। কুখ্যাত যৌন কেলেঙ্কারি কেস ‘এপস্টাইন ফাইল’-এর প্রসঙ্গ তুলে মাস্ক এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘সত্যিই বড় বোমা ফেলার সময় এসেছে: এপস্টাইনের ফাইলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম আছে। এটাই আসল কারণ যে কারণে এগুলো প্রকাশ করা হয়নি। শুভ দিন কাটুক, ডোনাল্ড জুনিয়র ট্রাম্প!’ এর পরের পোস্টে ইলন কর্তা টিপ্পনি কেটে লিখেছেন,‘ভবিষ্যতের জন্য এই পোস্টটা মার্ক করে রাখুন। সময়ে সত্যি বাইরে আসবে।’

উল্লেখ্য, যৌন কেলেঙ্কারি কাণ্ড এই এপস্টাইন ফাইল। জেফ্রি এপস্টাইন নামে এক ব্যক্তিকে যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। নাবালিকাদের যৌন শোষণ ও পাচারের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই প্রসঙ্গে এপস্টাইনের নেটওয়ার্ক, কার্যকলাপ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর সংযোগও সামনে আসে। শোনা যায়, প্রভাবশালীদের যৌন চাহিদা মেটাতে নাবালিকাদের তাদের কাছেও পাঠাতেন জেফ্রি এপস্টাইন। এ হেন ব্যক্তির সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ যোগের প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল জল্পনায়। সেই পুরোনো বিতর্ক আবার খুঁচিয়ে দিলেন টেসলা কর্তা।