রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের সভা
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে | প্রকাশিত: ৯ আগষ্ট ২০২১, ২২:৩০
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের বিষয়ে মস্কোয় রোসাটমের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৷
রাশিয়ান ফেডারেশনে সফরত বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আণবিক শক্তি কমিশন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি রোসাটমের টেকনিক্যাল একাডেমি পরিদর্শন করেন ও এ বিষয়ে আলোচনা সভা করেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন রোসাটম রাষ্ট্রীয় আণবিক শক্তি কর্পোরেশন ও রোসাটম সার্ভিস জেএসসি এবং টেকনিক্যাল একাডেমির ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা। রোসাটম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রাশিয়াতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ১শ ৫শ’র বেশি পিসিআর টেস্ট করা হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশিক্ষণের সময় তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণের সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এবং এএসই জেএসসির ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেক্সি ডেইরী বলেন, বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থীদের রাশিয়ায় পাঠানোর প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা হয়েছে। এতে এখন তাদের প্রশিক্ষণের সম্পূর্ণ সময়ে রাশিয়াতে অবস্থানের জন্য ভিসা দেওয়া হবে।
এছাড়াও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কার্যতালিকা অনুযায়ী আমাদের ট্রেনিংয়ের গ্রুপ পাঠাতে হচ্ছে। আমরা এখন সব ধরনের কাজ সমন্বয়ের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া এ মুহূর্তে ইপিসি চুক্তি অনুসারে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি উন্নত সময়সূচি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বৈঠকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রশিক্ষণ এবং পদ্ধতিকরণ উপকরণ, ডকুমেন্টেশন, কম্পিউটার ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, পোস্টার ও জটিল তথ্য ব্যবস্থায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তি, ভিভিইআর ১২০০ পাওয়ার ইউনিট এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রদর্শনের জন্য একটি ভিজুয়াল প্রোটোটাইপিং থ্রিডি প্রদর্শনী কমপ্লেক্সের সঙ্গে পরিচিত হন।
বৈঠক শেষে ইয়াফেস ওসমান বলেন,‘রাশিয়ার পরিকল্পনায় বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ আমাদের জন্যে বিশেষ গর্বের বিষয়। পারমাণবিক প্রযুক্তি নতুন প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর
করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেকনিক্যাল একাডেমির অনেক প্রশিক্ষক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তাদের কর্মজীবন শুরু করেছে এবং তারা প্রযুক্তিটি সম্পর্কে সম্মক ধারণা রাখে। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতার সমন্বয় এই ধরনের জটিল প্রযুক্তি আয়ত্তে নিয়ে আসার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
রোসাটম সার্ভিস জেএসসির ট্রেনিং প্রজেক্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ভিভোলোদ ভিটিয়াজেভ বলেন, গ্রাহকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মান বাড়ানোর জন্য ২০১৮ সালে একটি বড় বিনিয়োগ কর্মসূচি চালু করা হয়, ক্লাসরুম মেরামত করা হয়, আইটি ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা হয়।
তিনি আরো জানান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য ১৭০ জন নতুন প্রজন্মের প্রশিক্ষককে প্রস্তুত করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বছরের শেষে সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে জেএসসি রোসাটম সার্ভিসের হাইটেক কোম্পানি জেইটি নির্মিত (জেএসসি রোসাটম সার্ভিসের সহোযোগী প্রতিষ্ঠান) এনালিটিকাল এবং ফুল স্কেল সিমুলেটর থাকবে।
রোসাটম টেকনিকাল একাডেমির প্রশিক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের ছাত্ররা শিক্ষিত, তাদের দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করা মার্জিত মানসিকতা সম্পন্ন। মিড টার্ম পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের গড় সাফল্য ৯৫ দশমকি ৫ শতাংশ।
টেকনিক্যাল একাডেমির প্রথম ভাইস রেক্টর ভ্লাদিমির আস্পিসভ বৈঠক শেষে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম গ্রুপের রোসাটমের এই টেকনিক্যাল একাডেমিতে আসার ঠিক তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। এই পুরো সময়ে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপকরা একাডেমিকে মনোযোগসহ পর্যবেক্ষণ করছে।
এটি প্রশিক্ষণের সময়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় গ্রাহকের সমস্ত মন্তব্য এবং পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে থাকি এবং নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা প্রশিক্ষণার্থীদের পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ যোগায়।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: পাবনা
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।