আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যে গোপালগঞ্জে খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৫৪

আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যে গোপালগঞ্জে খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কারোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ দেড় বছর পর ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জে স্কুল ও কলেজে একযোগে শুরু হয়েছে ক্লাস। স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পদচারণায় আবারো হয়ে উঠেছে মুখরিত। এসময় শিক্ষার্থীদের চকলেট দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণী, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয়দিন ও অন্যান্য শ্রেণীর একদিন করে ক্লাস হবে। দীর্ঘ দিন পর বিদ্যালয় খুলে দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে সারা দেশের মত দেড়’ বছর বন্ধ ছিল গোপালগঞ্জ জেলার ১২’শ এর বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

১২ সেপ্টেম্বর জেলার ৮৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০৩টি মাধ্যমিক, ৮৯টি মাদ্রাসা ও শতাধিক কিন্ডারগার্ডেন স্কুল এবং কলেজে শুরু হয়েছে ক্লাস। আগের দিনে বিভিন্ন স্কুলে রঙ্গিন কাগজ ও ফুল দিয়ে বিদ্যালয় ও ক্লাস রুম সাজানো হয়।

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই ক্লাসে যোগ দিতে স্কুল ও কলেজ গেটে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। স্কুলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের শারীরের তাপমাত্রা মেপে ও সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে এবং স্যানিটাইজ করে বিদ্যালয় ও কলেজে প্রবেশ করতে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এসময় শিক্ষার্থীদের চকলেট দিয়ে বরণ করা হয়। অনেক দিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়ে তারা।

পরে সামাজিক দূরত্ব বজার রেখে একই বেঞ্চে দুইজন করে শিক্ষার্থী বসানো হয়। এরপর চিরচেনা রূপে শুরু হয় ক্লাস। শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার উপর নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন।

দীর্ঘদিন পর ক্লাস করতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। এতে করে দেশ বছরে পড়াশোনায় যে ঘাটতি থেকেছে তা কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া স্কুল খুলে ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারো নিয়ম-শৃংখলার মধ্যে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। সেই সাথে উৎসাহ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে পরে খুশি শিক্ষকরাও।

বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া আলমগীর মেঘলা বলেন, আবারো স্কুলে আসতে পরে শুধু আমি না সবাই আনন্দিত। আবার স্কুলে আসতে পারবো ভাবতে পারিনি। কিছু দিনের মধ্যে মাধ্যমিক জীবন শেষ করে কলেজে উঠবো এটা ভাবতেই খুব আনন্দ লাগে।

একই স্কুলের ১ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ওশান বিশ্বাস বলেন, দেড় বছর পর আমরা আবার স্কুলে আসতে পেড়েছি। আবারো শিক্ষক ও বান্ধবীদের সাথে দেখা হলো। সেই সাথে পড়াশোনাও মনোযোগ দিতে পারবো। স্কুলে ক্লাস করতে পারায় খুব আনন্দ লাগছে।

স্বর্ণকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফেরদৌস কবির রাদিন বলেন, দীর্ঘ করোনাকালীন ছুটির পর আবারও আমরা ক্লাসে যোগ দিতে পেরেছি। আমরা সবাই আনন্দিত। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েই আমরা আগামী দিনে ক্লাস করতে পারবো।

শহরের পাচুঁড়িয়া এলাকার সৈয়দ আকবর হোসেন বলেন, দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেয়ের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটেছিল। আবারো স্কুল খুলে দেয়ায় বাচ্চারা স্কুল গিয়ে পড়ালেখা করতে পারছে এতে আমি খুশি। ক্লাস করতে পারায় পড়ালেখায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে।

একই এলাকার একরামুল কবীর বলেন, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় আমার দুই ছেলে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। তবে স্কুলে খোলায় বাচ্চারা আবারো মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে পারবে। এতে আগামী দিনের প্রস্তুতি নিতে পারবে।

গোপালগঞ্জ এস এম মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, করোনাকালীন সময়ে দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা খুব কাছ থেকে পাঠদানে অভ্যস্ত ছিল। অনলাইনে ক্লাসে তারা অভ্যস্ত ছিল না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু পুঁথিগত শিক্ষা অর্জনের জন্য নয়, এখানে শিশুরা অনেক কিছুই শিখে থাকে। শিষ্টাচার শেখে, বন্ধুত্ব শিখে, মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে শিখে, নিজেদের মূল্যবোধের মাধ্যমে গড়ে তেলা শেখে। এতদিন বিদ্যালয়, মাঠ ও শ্রেণীকক্ষ কোলাহলহীন ছিল। আজ থেকে বিদ্যালয় কোলাহলে পূর্ণ হয়ে যাবে এটা ভাবতেই খুব ভাল লাগছে।

গোপালগঞ্জ বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় বাড়ৈ বলেন, আজকের দিনটি আমাদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুখের। এতদিন ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদেরও খারাপ লেগেছিল। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই স্কুলগুলো খুলে দেয়ার জন্য। সেই সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আর যাতে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া না লাগে। একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল হল নিরাপদ জায়গা। আমরা শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।

এনএফ৭১/বিএস/কেবিএ/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top