চুয়াডাঙ্গায় স্বামী'র বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, শাশুড়ী আটক

চুয়াডাঙ্গা থেকে | প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ২১:০৪

চুয়াডাঙ্গায় স্বামী'র বিরুদ্ধে স্ত্রী'র হত্যার অভিযোগ, শাশুড়ী আটক

দামুড়হুদার লোকনাথপুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহবধূ নুরজাহান খাতুন ওরফে নুরী বেগম (৪২) দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের জাহান আলীর স্ত্রী।

হত্যাকান্ডের পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত স্বামী। এ ঘটনায় নুরী বেগমের পর নুরজাহানের শাশুড়ি (৬৫) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ। গতকালই ময়নাতদন্ত শেষে পিতার গ্রাম রামনগরে সম্পন্ন হয়েছে নুরী বেগমের দাফনকাজ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের মাঝপাড়ার জমির উদ্দিনের ছেলে জাহান আলীর সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার রামনগরের মৃত আজিজুল হকের মেয়ে নুরজাহান খাতুনের। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি সন্তান রয়েছে। এরা হলো বিউটি খাতুন বিবাহিত ও জামিনুর রহমান।

বিয়ের দুই বছরের মধ্যেই যৌতুকের দাবি তোলেন জাহান আলী। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে সাধ্যমতো টাকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তুলে দেন জামাইয়ের হাতে। এরই মধ্যে আবারও যৌতুকের টাকার দাবিতে নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। বাধ্য হয়ে দুজনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দুটি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে দুই পরিবারের লোকজন তাদের দুজনকে আবার সংসার পাতিয়ে দেয়। কিছুদিন ভালোভাবেই তাদের সংসার চললেও আবারও স্বামী ও শাশুড়ি মিলে যৌতুকের টাকা দাবি করেন।

গৃহবধূ নুরজাহানের পিতা টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালে স্বামী-শাশুড়িসহ পরিবারের অন্য লোকজন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নুরী বেগমের ওপর নির্যাতন করতে থাকেন। গৃহবধূ নুরজাহান খাতুনকে সারা শরীরে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় শুক্রবার দিনগত রাত ৩টার দিকে প্রতিবেশীরা নুরজাহান ও ওরফে নুরী খাতুনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে মারা যান তিনি।

মারা যাওয়ার পর ওই গৃহবধূর মরদেহ কৌশলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সেখানে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের চেষ্টা করা হলে উভয় পরিবারের মধ্যে বাগবিত-ার সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পুনরায় সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহতের মা রহিমন বেগম জানান, তার মেয়েকে প্রায়ই নির্যাতন করতো জামাই জাহান আলী ও তার শাশুড়ি নুরজাহান।

নিহতের ভাই সুন্নত আলী জানান, এর আগে একবার আমার বোনকে তালাক দিয়েছিলো। দুটি সন্তানের কথা ভেবে আবারও সংসার পাতিয়ে দেয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তবে জাহান আলী ছিলো পাষ-। আমার বোনটাকে প্রতিদিন মারধর করতো।

হাউলী ইউপির মেম্বার (লোকনাথপুর এলাকা) মো. রিকাত আলী বলেন, গতরাতে (শুক্রবার) সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো গৃহবধূ নুরীকে। এরপর সেখানে ভোররাত ৪টার দিকে সে মারা যায়। খবর পেয়ে সকালে দেখতে আসি। নিহত গৃহবধূর শরীরের সমস্ত জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় ও চোখে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়েছে। শনিবার রাতেই নুরী খাতুনের পিতা-মাতার বাড়ি রামনগরে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেক জানান, এ ঘটনায় নুরীর ভাই সুন্নত আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রধান আসামির তালিকায় রয়েছেন পাষন্ড স্বামী জাহান আলী, শাশুড়ি নুরজাহান বেগম, দেবর আশানুর, আনেয়ার, ননদ মাছুরা বেগম ও নুন্দায় নজরুল। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গৃহবধূর শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এনএফ৭১/জেএস/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top