গাইবান্ধায় ঝড়ের বাড়ী ঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, নিহত ১২, আহত ৩০

গাইবান্ধা থেকে | প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৪৮

গাইবান্ধায় ঝড়ের বহু বাড়ী ঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, নিহত ১২, আহত৩০

গতকাল ৪ এপ্রিল বিকালে বৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে গাইবান্ধার সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য বসতবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়াসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঝড়ের কবলে ঘর ও গাছের চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে শিশু-নারীসহ ১২ জনের। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জনের বেশি মানুষ। রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পাঠানো মৃত্যুর প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহতরা হলেন- পলাশবাড়ি উপজেলার গোফফার রহমান (৪২), জাহানারা বেগম (৪৮)ও মমতা বেগম (৫৫), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ময়না বেগম (৪০), ফুলছড়ি উপজেলার শিমুলি আকতার (২৭) ও হাফেজ উদ্দিন (৪৪), অজ্ঞাত একজন, সাদুল্লাপুর উপজেলার আবদুস ছালাম সর্দার (৪৫), সদর উপজেলার শিশু মনির মিয়া (৫) ও আরজিনা (২৮) এবং বাদিয়াখালির শেফালি বেগম (৬৫),গোবিন্দগঞ্জের হরিরামপুর ইউনিয়নের রামপুরা গ্রামের শারমিন (১৯)।

এর মধ্যে গাছের চাপা পড়ে মৃত্যু হয় শিশু মনি ও শারমিনের গোফফার, জাহানারা ও ময়না বেগমের। ঘরের নিচে চাপা পড়ে শিমুলি আকতার ও অটোরিকশা উল্টে মৃত্যু হয় হারিস মিয়ার। এ ছাড়া দোকান থেকে বাড়ি ফিরেই মৃত্যু হয়েছে আবদুস ছালামের। আরজিনা ও হাফেজ উদ্দিন আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। এদিকে, প্রচন্ডগতির দমকা ঝড়ে সদর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জেলাজুড়েই। দীর্ঘসময় অন্ধকার অবস্থার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, হঠাৎ দমকা বাতাস ও গাছপালা ভেঙে জেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে গেছে। ফলে বিকেল থেকেই জেলা ও উপজেলা শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভেঙে পড়া খুঁটিসহ তার মেরামতের কাজ চলমান থাকলেও ভোর পর্যন্ত জেলায় মিলবে না বিদ্যুৎ সংযোগ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গাইবান্ধা জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক জানান, ঝড়ো বাতাসে বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামে ক্ষতি বেশি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খুঁটি ও তারের উপর ভেঙে পড়েছে গাছপালা-ঘরবাড়ি। ভেঙে পড়া গাছপালা সরানোসহ বিদ্যুতের খুঁটি মেরামতে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চললেও রাতের মধ্যে তা শেষ করা সম্ভব নয়। এ কারণে রাতভর জেলা জুড়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় জেলা শহর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রাখার চেষ্টা চলছে।

এদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মিলন কুমার কু-ু জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। প্রায় ৩২ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত ও চেকিং করতে ইতোমধ্যে বিভিন্নস্থানে কাজ করছে কয়েকটি টিম। তবে রাতেই পুরো লাইন চেক করা সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সোমবার দুপুরের আগে সব লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, ঝড়ো হাওয়ায় জেলার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ নিরূপণে সাত উপজেলাতে কাজ চলছে। ঝড়ে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। ভেঙে পড়া গাছ অপসারণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক রাখতে জেলাজুড়েই বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top