রাজশাহীতে লু হাওয়ায় পুড়ে গেছে ২৮ হেক্টর জমির ধান

রাজশাহী থেকে | প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২১, ২৩:১২

রাজশাহীতে লু হাওয়ায় পুড়ে গেছে ২৮ হেক্টর জমির ধান

প্রকৃতিতে হঠাৎ গরম বাতাস। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় এমন বাতাসকে বলা হয় ‘লু হাওয়া’। এই লু হাওয়ায় রাজশাহীর ২৮ হেক্টর জমির ধান পুড়ে গেছে। কৃষিবিদেরা একে ‘হিটশক’ বলছেন। তীব্র তাপমাত্রায় ধানগাছ শুকিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকেই হিটশক বলা হয়ে থাকে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহীতে চলতি বোরো মৌসুমে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধানচাষ হয়েছে। গত রোববার বিকালে লু হাওয়ায় ২৮ হেক্টর জমির ধানগাছ পুড়েছে। হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টন ধান হিসেবে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬৮ মেট্রিক টন। কিছু দিন পর ক্ষতি ভালভাবে বোঝা যাবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, লু হাওয়ায় রাজশাহীর তিনটি উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এগুলো হল- পবা, তানোর ও গোদাগাড়ী। গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এসব এলাকায় বিরাজ করছে শুষ্ক বাতাস। প্রতিদিন তাপমাত্রা থাকছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। তাই মাঝে মাঝেই দেখা দিচ্ছে লু হাওয়া। গত রোববার পবা উপজেলার ওপর দিয়ে লু হাওয়া বয়ে গেছে।

বুধবার (৭ এপ্রিল) রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পবা উপজেলার আলিমগঞ্জ ও কসবা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা কৃষকের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু শুনেছেন। ক্ষয়ক্ষতি কেমন হতে পারে সেটিও নিরূপণ করেছেন। এখন করণীয় কি সেটাও তাঁরা চাষিদের জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ এই দলে ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউিটের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. ফজলুল ইসলাম, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মনিরুজ্জামান, উদ্ভিদ ও রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তাহমিদ হোসেন আনছারী, বিজ্ঞানী ড. কাজী শিরিন আক্তার জাহান এবং উদ্ভিদ কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোসাদ্দেক হোসেন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মো. ফজলুল ইসলাম বলেন, এবার দীর্ঘ সময় বৃষ্টির দেখা নেই। আবহাওয়া অত্যন্ত রুক্ষ। ৪ এপ্রিল সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ছাড়াই ঝড় শুরু হয়। সেদিন বাতাস ছিল অতিরিক্ত গরম। আর্দ্রতা ছিল শূন্যের কাছাকাছি। ফলে সেদিন যেসব ধানের শীষ বের হয়েছিল সেগুলোর ফুল হিটশক হয়ে ঝরে গেছে। লু হাওয়ার কারণেই এটা হয়েছে। বৃষ্টি হলে এটা হত না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, ৪ এপ্রিল ঘন্টাব্যাপি বৃষ্টিহীন ঝোড়ো বাতাস প্রবাহিত হয়েছে। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ও বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় বোরো ধানের ক্ষেতের শীষ মরে গেছে। তিনি আরো বলেন, জলীয় বাষ্প কম থাকলে আমরা যে তাপমাত্রা রেকর্ড করি না কেন, এর চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হবে। তখন মনে হয় লু-হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সেদিন মূলত এ ব্যাপারটা ঘটেছিল।

তিনি জানান, লু হাওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজশাহীর ২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান হিটশকে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এটি মোট আবাদ করা জমির ধানের শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ। এটি খুব কম। তবে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন ধান হিসেবে ১৬৮ মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে।

এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১



বিষয়: রাজশাহী


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top