তামিম ইকবাল! একজন জীবন্ত কিংবদন্তি!

রাশেদ রাসেল | প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারী ২০২৪, ১৮:২১

ছবি: সংগৃহীত

তামিম ইকবাল, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সেরা ব্যাটার, দেশ সেরা ওপেনার। ব্যাটিং এর সকল অর্জনই তার দখলে। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফর্মেটেই সেঞ্চুরীসহ বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরীর মালিক তিনি।

জন্মঃ

তামিম ইকবাল  ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইকবাল খান ও মা নুসরাত ইকবাল। তার বাবা ছিলেন ফুটবলার ও ক্রিকেটার। ২০০০ সালে মারা যান তিনি। বড় ভাই সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল। তাদের একটি ছোট বোন রয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান তার চাচা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকঃ

২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে খান পরিবারের এই ছোট খানের। তার পরের বছর ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তামিম ইকবালের।  

অধিনায়কত্বঃ

২০২০ সালের ৮ মার্চ মাসরাফির অবসর গ্রহণের পরে তামিমকে বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারঃ

বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই ক্রিকেটে পা রাখেন তামিম ইকবাল। তারপর সময়ের সাথে বাংলাদেশের জার্সিতে হয়ে উঠেছেন দেশের সেরাদের একজন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরমেট মিলিয়ে ২৫ সেঞ্চুরীর মালিক তিনি। ওয়ানডেতে ১৪ টি, টেস্টে ১০ টি এবং টি-টোয়েন্টিতে ১ টি সেঞ্চুরী রয়েছে তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার দুইশ ৪৯ রান করেছেন তামিম ইকবাল।

৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে করেছেন ৫১৩৪ রান। যাতে সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি রয়েছে ৩১টি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির তামিম।

২৪৩ ওয়ানডে খেলে ৩৬.৬৫ গড়ে ৮৩৫৭ রান। ১৪ সেঞ্চুরি আর ফিফটি ৫৬টি। এ সংস্করণে দেশের হয়ে রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি—সবকিছুতেই তিনিই শীর্ষে।  

টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে ১ হাজার ৭৫৮ রান করেছেন তামিম। এই ফরমেটে ১টি সেঞ্চুরীর পাশাপাশি রয়েছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরী।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরীঃ

তামিম ইকবাল ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ টি২০ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি করেন ৷ এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র সেঞ্চুরী।  তিনি বাংলাদশের হয়ে প্রথম এক হাজার রানের ক্লাবেও প্রবেশ করেন৷

টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরঃ

২০২২ সালের ১৭ই জুলাই তামিম নিজের ফেসবুক পেজে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেন।

ক্যারিয়ারে অর্জনঃ

২০১১ সালে তামিম উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ম্যাগাজিন কর্তৃক বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন। গ্রেম সোয়ান ও বীরেন্দ্র শেবাগকে পেছনে ফেলে তামিম এ খেতাব জিতে নেন।

লর্ডসের অনার্স বোর্ডে কিংবদন্তি তামিমঃ

২০১০ সালে লর্ডসের টেস্টটিতে ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় একটি ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৫ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন সেঞ্চুরি। সেই ম্যাচ বাংলাদেশ ৮ উইকেটে হারলেও সেঞ্চুরির সুবাদে অন্য রকম এক আনন্দে ভেসেছিলেন তামিম। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম উঠেছে তার। সেঞ্চুরি করলে বা বল হাতে ৫ উইকেট পেলেই লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম ওঠে কারও। যেখানে নাম তুলতে পারেননি কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারসহ আরও অনেক বড় বড় তারকা।

ভাঙ্গা হাতে ব্যাট করতে নামেন তামিম ইকবালঃ

২০১৮ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সুরঙ্গা লাকমলের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে চোট পান তামিম। লাকমলের লাফিয়ে উঠা বলটি পুল করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু ব্যাটে বলে করতে পারেননি তিনি। সেটি গ্লাভসের উপরের অংশে লাগে। চোট পান কবজিতে। ফিজিও ছুটে আসেন মাঠে। কিন্তু তামিম আর ব্যাটিং করার জন্য উপযুক্ত হতে পারেননি। মাঠ ছাড়েন তখনই। মোস্তাফিজুর রহামন রান আউট হতেই ৪৬.৫ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস থামল বলে ধরে নিয়েছিলেন সবাই। টাইগারদের রান তখন ৯ উইকেটে ২২৯ রান। তামিম ইকবাল কবজির চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে গেছেন। পুরো এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে গেছেন তিনি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে নবম উইকেট পড়ার পর ব্যাট করতে নামেন তামিম। একহাতেই ব্যাট করলেন এই ব্যাটার। কাপালেন কোটি কোটি ভক্তের মন।

এর এটা দেখে সাজিবুল নামের এক ভাষ্যকার মন্তব্য করলেন এইভাবে, ‘ও মাই গড তামিম! আমি তোমাকে ভালোবাসি! তার এই অবিশ্বাস্য সাহস দেখে সত্যিই আমার চোখ দিয়ে অশ্রু চলে এলো’। ক্রিকইনফোর লাইভ ধারাভাষ্যে লেখা হলো, ‘অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য। তামিম ইকবাল এগার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে হাঁটছেন। তাও মাত্র এক হাত দিয়ে? অসাধারণ দৃশ্য। তামিম ইকবালের পক্ষ থেকে অবিস্মরণীয় এক সাহসিকতার কাজ।’

শুধু ভাষ্যকার নয় দেশের প্রতি তামিমের এই দায়িত্ববোধ দেখে টেলিভিশনের সামনে থাকা অসংখ্য দর্শকদের চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়েছিলো এ ঘটনায়।  

অবসরের সিদ্ধান্ত ও প্রত্যাহারঃ

২০২৩ সালের ৬ জুলাই, চট্টগ্রামে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তামিম ইকবাল নিজের ক্যারিয়ারের ১৬ বছরের মাথায় হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।” তবে পরদিন ৭ জুলাই, তিনি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সঙ্গে গণভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।সাক্ষাৎ শেষে তিনি নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন এবং বলেন, “আমি আমার রিটয়ারমেন্ট এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে না বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব”।

তামিম ইকবাল খান, তার সতীর্থরা তাকে ডাকেন কলিজাওয়ালা খান নামে। যখন যেখানে বিপদে ক্রিকেটার থেকে সাধারণ মানুষ তখন ‍সেখানেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তামিম। আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কবে ফিরবেন বা আদৌ ফিরবেন কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

কোটি ভক্তের হৃদয়ে গেঁথে থাকবেন আজীবন। শুভ কামনা জীবন্ত কিংবদন্তি।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top