বৃহঃস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

‘মৃত্যু মস্ত ফাঁকি’—হাসপাতাল থেকে ফিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক নচিকেতা চক্রবর্তী

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৪৪

সংগৃহীত

দুই বাংলার গানের জগতে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর বলতে যে নামটি প্রথমেই উঠে আসে, তিনি নচিকেতা চক্রবর্তী। সময়ের অন্যায়, সামাজিক অসংগতি আর সাধারণ মানুষের কথা অকপটে গানে তুলে ধরে নব্বই দশক থেকে আজ পর্যন্ত প্রজন্মের পর প্রজন্মের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন এই জীবনমুখী গানের শিল্পী। সম্প্রতি আবারও আলোচনায় উঠে এলেন তিনি—নিজের শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা এক ভিডিও ও দীর্ঘ বার্তাকে ঘিরে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। চিকিৎসকদের তৎপরতায় তার হার্টে দুটি স্টেন্ট বসানো হয়। বর্তমানে তিনি অনেকটাই সুস্থ। ভক্তরা যখন তার আরোগ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন, ঠিক তখনই নচিকেতার একটি ফেসবুক ভিডিও ও লেখা নতুন করে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে শেয়ার করা ভিডিওটির ক্যাপশনে নচিকেতা লেখেন,“মৃত্যু মস্ত ফাঁকি।”

সেই লেখাতেই নিজের জীবনের নানা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা অকপটে তুলে ধরেন এই শিল্পী। জানান, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা তার কাছে নতুন নয়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাইক থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। ২০ বছর বয়সে শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরেই বেঁচে যান—শেষ মুহূর্তে জায়গা বদলানোর কারণে পুলিশের গুলি এসে লাগে তার বন্ধুর বুকে।

এছাড়াও তিনি লেখেন, ১৬ বছর বয়সে পাতাল রেলের নির্মীয়মাণ টানেলে জলে ডুবতে ডুবতে প্রাণে বেঁচে যান। ৭ বছর বয়সে ক্ষুদিরামের ছবি দেখে গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিলেন, আর ৬ বছর বয়সে নকশাল আন্দোলনের প্রভাবে স্কুলে আগুন লাগানোর ঘটনাতেও বেঁচে ফেরেন। পরে ৪৭ বছর বয়সে দিল্লির এক হাসপাতালে সার্জারির টেবিল থেকেও ফিরে আসেন তিনি। সর্বশেষ, ২০২৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও মৃত্যুকে ফাঁকি দেন এই গায়ক।

নিজের লেখায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া মৃত্যুর গুজব নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নচিকেতা লেখেন,

“আমার লেখা যদি ভালো লাগে ভালো, না লাগলে কমেন্ট করবেন না। আপনাদের কমেন্টের আশায় আমি বসে নেই। নিজেকে জরাজীর্ণ প্রমাণ করতে গিয়ে কমেন্ট করবেন না। আবারও বেঁচে এলাম—হয়তো ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করবেন। এবার আপনারা মৃত্যু ঘোষণা করলেই কথা দিচ্ছি, মরে যাওয়ার চেষ্টা করব। অন্তত আপনাদের মান রাখতে।”

তার এই তীব্র ভাষা থেকেই স্পষ্ট—হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতেই ভীষণভাবে আঘাত পেয়েছেন ৬১ বছর বয়সী এই শিল্পী।

তবে সময় বদলালেও নচিকেতা চক্রবর্তীর গান, বক্তব্য ও অবস্থান আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রতিবাদী কণ্ঠ, স্পষ্ট মতাদর্শ আর সুরের মাধ্যমে সমাজের আয়না ধরে রাখার যে দায় তিনি নিয়েছেন, তা কখনও ম্লান হওয়ার নয়। এই কারণেই প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে নচিকেতা শুধু একজন সংগীতশিল্পী নন—তিনি এক চেতনার নাম।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top