গরু ছাগল পালন করে স্বাবলম্বি হয়েছি, প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা
উত্তরার হিজড়া সম্প্রদায়ের চেয়ারম্যান হাজী কচি বেগমের একান্ত সাক্ষাৎকার
মনির হোসেন জীবন | প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩০
রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর এর ডিআইজি (পার্সোনাল) ম্যানেজমেন্ট ''উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যাণ'' হাবিবুর রহমান (বিপিএমবার, পিপিএম) এর নির্দেশনায় যে ভাবে চলছে ''উত্তরণ ফাউন্ডেশন বহুমূখী খামার প্রকল্প''টি।
বর্তমানে খামারটি সার্বিক দেখাশোনা ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও উত্তরা-তুরাগ এলাকার হিজড়া সংস্থার চেয়ারম্যান হাজী কচি বেগম।
হিজড়া সম্প্রদায়ের নেত্রী হাজী কচি বেগম বিগত সরকারের শাসনামলে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বর্তমানে সফল খামার ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। বিগত সাড়ে ৪ থেকে ৫বছরে মাত্র চারটি খামারী গরু দিয়ে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন সেই খামারে ছোট বড় দেশী বিদেশী গরু মিলে বর্তমানে ১৮/২০টিতে দাড়িয়েছে।
হিজড়া সংস্থার চেয়ারম্যান হাজী কচি বেগম এখন অনেকটা স্বাবলম্বি। সেই সাথে তিনি একজন সফল উদ্যাক্তা ও বটে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য তিনি আগামী দিতে আরও ভাল কিছু করতে চান। এজন্য তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি পুলিশ কমিশনার, উত্তরা বিভাগের পুলিশের ডিসি,উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যাণ হাবিবুর রহমান (বিপিএমবার পিপিএম)সহ সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিস্ট মহলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
উত্তরায় হিজড়া সংস্থার চেয়ারম্যান হাজী কচি বেগমের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকমকে তিনি এসব কথা বলেন।
পারিবারিক জীবনের কথা উল্রেখ করে তিনি নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকম বলেন, আমার পিতার নাম মৃত কেরামত আলী হাওলাদার। মাতার নাম নূরজাহান বেগম। বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার হানুয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহন করেন।
এর পর গ্রাম থেকে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। প্রথমে ঢাকায় এসে আশ্রয় নেয় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে। এরপর পর্যায়ক্রমে টঙ্গী, উত্তরা ও সবশেষ তুরাগের কামারপাড়ায় আশ্রয় নেয়। প্রায় ৩৭ বছর ধরে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া রাজাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে আসছে হিজড়া নেত্রী হাজী কচি বেগম।
এক প্রশ্নের জবাবে হাজী কচি বেগম নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকম জানান, উত্তরণ ফাউন্ডেশন প্রকল্প এর অধিনে বর্তমানে আমার খামারে ছোট বড় মোট ১৮ টি গবাদি পশু গরু-ছাগল রয়েছে। তার মধ্যে পাচটি গাভী রয়েছে। দু'টি গাভী দৈনিক সকাল সন্ধ্যা পনের থেকে বিশ লিটার দুধ দিচেছ। প্রতি লিটার দুধের মূল্য প্রায় একশত টাকা।
উত্তরা ১০ নং সেক্টরসহ বিভিন্ন সেক্টরের বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া,আড়ৎদার, ট্রাফিক-পুলিশ, সার্জেন্টরা হলো আমার দুধের ক্রেতা। কেবলমাত্র তারাই আমার কাছ থেকে ভাল ও উন্নতমানের খাটি দুধ নিয়ে যায়।
ইচেছ করলে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে উল্লেখ করে তিনি নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকম বলেন, আমার জীবটা ছিল অনেক কষ্টের। ছোট থেকে বড় হয়েছি। মেধা,বুদ্বি,সৎ সাহস ও ধৈর্য্য থাকলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও সমাজে অনেক কিছুই করতে পারে। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে রাজধানীতে বসবাস করছি।
হিজড়া নেত্রী কচি বেগম বলেন, প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে আমি উত্তরা কামারপাড়া বেরিবাধ সংলগ্ন আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের সামনে সরকারী পরিত্যক্ত জমিতে বসবাস করে আসছি। প্রথমে আমি আমার নিজের টাকা দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরী করি।
এতে প্রায় ১৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আমি ঘর নির্মাণের দেড় মাস পর হবাদি পশু গরু পাই। আমার উত্তোলন প্রকল্প খামারটি শুভ উদ্বোধন করেন ততকালীন ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো: হাবিবুর রহমান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন. বর্তমানে আমার খামারে দেশি বিদেশী গরু পালনের জন্য দুইটি টিনসেটে ঘর, হাস মুরগি পালনের জন্য একটি, ছাগল পালনের জন্য একটি, আমার হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাসের জন্য একটি ঘর এবং নিজের জন্য আরও একটি ঘর রয়েছে।
বর্তমানে উত্তরা ও তুরাগে প্রায় শতাধিক হিজড়া বসবাস করছে দাবি করে হিজড়া নেত্রী হাজী কচি বেগম নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকমকে জানান, আমার অধীনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষ রয়েছে। এছাড়া আরও আমার নেতৃত্বে অর্ধশত হিজড়া তুরাগে ও উত্তরায় বসবাস করছেন। আর আমি হলাম এদের গুরু। ওরা সবাই আমার চেলা ও মেয়ে। সবাই আমাকে গুরুমা বলে ডাকে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য উত্তরা ও তুরাগে সরকারী পরিত্যক্ত খাস জমিতে আবাস ব্যবস্থা গড়ার দাবি জানিয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের চেয়ারম্যান বলেন, উত্তরা ও তুরাগে অনেক খাস জমি রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ইচেছ করেন তাহলে ওই জমিতে আমাদের বসবাসের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন। আমরাও মানুষ,আমাদেরও বেচে থাকার অধিকার রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজন সবাই একত্রে মিলেমিশে বসবাস করতে চাই।আমাদেরকে সেই সুযোগ করে দেয়া হোক।
আমি ও আমার হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে করে স্বচছভাবে জীবনযাপন করতে পারে সে জন্য আমি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রম উপদেষ্টা স্যারের নিকট নতুন করে বেশ কিছু গরু ও ছাগল উপহার হিসাবে আমাদেরকে দেয়ার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।
অনেক হিজড়া এখনও পর্যন্ত সরকারী ভাবে বয়স্ক ভাড়া পাচেছনা জানিয়ে হাজী কচি বেগম নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকমকে জানান, তৃতীয় লিঙ্গের সকল মানুষদেরকে যেন সরকারী ভাবে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। হিজড়াদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হোক।
সে দিকে সরকার প্রধানকে নজর দিতে হবে।হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে যেন জাতীয় পরিচয়পত্র, এনআইডি কার্ড পায়, তারা যেন ভোটার হতে পারেন। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হিজড়ারা যেন আগামীতে সমাজে সুস্থধারায় ফিরে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, হিজড়া সম্প্রদায়ের সকল মানুষদেরকে সরকারী ভাবে যেন প্রশিক্ষন ও কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। তারা যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্জিত না হয়। সে দিকে সরকার ও প্রশাসনকে নজর দিতে হবে। তাদেরকে যেন ভোকেশনায় ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
এদিকে, হিজড়া নেত্রী কচি বেগমের শিষ্য কবিতার সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে সে জানান, তুরাগের ধউর এলাকায় কাচাবাজারের পাশে বসবাস করছেন কবিতা হিজড়া। তার আসল নাম হলো কবির। কবিতার মাতার নাম জাহানারা বেগম।
বর্তমানে কবিতার অধীনে ১৫ থেকে ২০ জন হিজড়া রয়েছে। তারা সকলে আমার সাথে বসবাস করছেন।তার মধ্যে রয়েছেন-হিজড়া সদস্য নুপুর, মেঘলা, ইভা, শিলন, রানী, কমলা, মিলনী, মারুফা প্রমুখ।
এক প্রশ্নের জবাবে কবিতা হিজড়া নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকমকে জানান, আমি আমার গুরুর মতো স্বাবলম্বি হতে চাই। বর্তমান সরকার যদি আমাকে একটু দয়া তরে সাহার্য্য করেন তাহলে আমি গরু ছাগল পালনের জন্য খামার দিতে চাই।
তিনি বলেন, আমাকে যেন অচিরেই সরকারী ভাবে বেশ কিছু গরু ও ছাগল প্রদানের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য সরকার প্রধান ও সরকারে সংশ্লিস্ট মহলের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সম্পাদনা : রাহুল রাজ
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।